নিজস্ব প্রতিবেদক »
তিন দফায় দিন নির্ধারণের পরও হয়নি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এরপর মার্চে সম্মেলন হওয়ার গুঞ্জন ওঠলেও চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনের কারণে তা আটকে যায়। এরমধ্যে ইউনিট পর্যায়ের সম্মেলন প্রায় শেষ হলেও ওর্য়াড পর্যায়ে সম্মেলন হয়েছে কেবল ৯টিতে। এছাড়া থানা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। এরমধ্যে জুলাইয়ের শেষেই সম্মেলনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন মহনগরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য গত বছর ১ অক্টোবর ও ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বরে তিন দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারিতে রাজধানীর পার্লামেন্ট মেম্বার ক্লাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মার্চে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনের কারণে সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পুনরায় পেছানো হয়।
এ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমাদের ইউনিট পর্যায়ের সম্মেলন প্রায় শেষ। ওয়াড পর্যায়েও বেশ কিছু সম্মেলন হয়েছে। তবে থানা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন করা হয়নি। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। এরপর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হবে।’
উল্লেখ্য, ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন করতে গিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি বলয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
এ বিভেদ নিয়ে কথা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নইমুদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনেক বড় একটা পার্টি। অনেক নেতা-কর্মী আছে এ সংগঠনে। সকলেই পদ-পদবী চায়। এ নিয়ে নানা বাদ-বিবাদ থাকতে পারে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন হলে সেখান থেকে নেতাকর্মী উঠে আসার সুযোগ পায়। মূল পার্টিকে শক্ত করতে সম্মেলনের বিকল্প নেই। তাই এখানে সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ১৩৩টি ইউনিটের মধ্যে ৭-৮টির মতো বাকি আছে। এছাড়া ৪৪টির মধ্যে ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়েছে। আরও সাত-আটটি শীঘ্রই হতে পারে। ওগুলো শেষ হলে থানা পর্যায়ে দিনে দিনেই শেষ হবে।’
সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে কথা হলে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সম্মেলন নিয়েতো কিছু জানি না। সম্মেলন করতে হলে তার আগে একটা আহ্বায়ক কমিটি করতে হয়। একেকজনের কাছে একেকটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে তো কোনো মিটিং হচ্ছে না। এখন কেন্দ্রের কথা মতো যদি কিছু হয়, সেখানে তো আর কিছু বলার নেই।’
সম্মেলনের প্রস্তুতি ও আহ্বায়ক কমিটি প্রসঙ্গে কথা হলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘উপ-নির্বাচনের কারণে সম্মেলনের কোনো কাজ হয়নি। তবে এ মাসের মধ্যে ৭ থেকে ৮টি ওয়ার্ডের সম্মেলন হবে। আগামীকাল (৬ মে) আমরা চারটি ওয়ার্ডের সম্মেলনের তারিখ দিবো। ওয়ার্ডগুলো হলো- ১, ২, ৩ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড। এছাড়া ২৭ মে ২৯ নাম্বার ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কেউ যদি এখন কিছু না জেনে থাকে, এটি সম্পূর্ণ তার দায়। এখানে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে হাতে হাত ধরে কাজ করতে হবে। সাধারণ কোনো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি করা বা সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া ঠিক হবে না।’
কবে নাগাদ সম্মেলন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘কিছুদিন আগেও আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি) আমার সঙ্গে সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছেন। সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, বিভিন্ন বিরোধী শক্তি এখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। তাই নির্বাচনের আগে সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এক করতে হবে। আমরা আশা করছি, জুলাইয়ের শেষেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বাকিটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত।’
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আগে থেকে কথা ছিলো ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সম্মেলন হওয়ার পর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। নানা কারণে কয়েকবার সময় ঘোষণা করেও সম্মেলন হয়নি। তখনও ইউনিট পর্যায়ের সম্মেলন বাকি ছিলো। তবে এখন ইউনিট পর্যায়ের সম্মেলন প্রায় শেষ বলে জেনেছি। ইউনিট পর্যায়ের কাজ শেষ হলে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে বেশি সময় লাগবে না। আশা করছি, সঠিকভাবে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা সম্মেলনের কাজ শেষ করবেন। শেষ হওয়ার পরে আমরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ জুলাইয়ের শেষ নাগাদ ঘোষণা করে সম্মেলনটি সার্থক করতে পারবো।’