সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিজয়ের এক যুগ পার হলেও কোনো তেল-গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করা যায়নি বঙ্গোপসাগরে। শুরুতে চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি কোম্পানি সময়ের আগেই ছেড়ে গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাকি কোম্পানিটি কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে। নতুন কোম্পানিকে কাজ দিয়ে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত ১০ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এতে দরপত্র জমা দিতে ৬ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরে সময় শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস বাড়িয়ে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিদেশি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়নি।
বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সাতটি বিদেশি কোম্পানি দরপত্রের নথি কিনেছিল। এটি আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে তিন মাস সময় বাড়ানো হয়। দরপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১টায়। এর মধ্যে একটি দরপত্রও জমা হয়নি।
যদিও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি কোম্পানি কেন দরপত্র জমা দেয়নি সেই কারণ তারা জানেন না। তবে কারণ উদ্ঘাটনে শিগগির কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি প্রতিবেদন দিলে সরকারকে জানিয়ে নতুন করে দরপত্র আহ্বান জানানো হবে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র জানায়, বিদেশি কোম্পানিকে আগ্রহী করতে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি)-২০২৩ করা হয়েছিল। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম নির্ধারিত না রেখে জ্বালানি তেলের দামের ১০ শতাংশ ধরা হয়। তেলের দাম বাড়লে গ্যাসের দামও বাড়বে, কমলে এটিও কমবে। এখন তেলের দাম ৭০ থেকে ৭২ ডলার, এতে গ্যাসের দাম হবে ৭ থেকে ৭ দশমিক ২ ডলার। দরপত্র ডাকার সময় তেলের দাম ছিল ৯০ ডলারের বেশি। দরপত্র জমা না দেওয়ার এটি অন্যতম কারন হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল ও শেভরন, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস, নরওয়ে ও ফ্রান্সের যৌথ কোম্পানি টিজিএস অ্যান্ড স্লামবার্জার, জাপানের ইনপেক্স করপোরেশন ও জোগম্যাক, চীনের সিনুক, সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি এবং ভারতের ওএনজিসি আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপের তথ্য কিনেছিল শেভরন, এক্সনমবিল, ইনপেক্স, সিনুক ও জোগোম্যাক। শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ আসেনি দরপত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আনফরচুনেটলি দরপত্র জমা পড়েনি। হয়তো কোনো কারণ থাকতে পারে। আমরা কারণ উদ্ঘাটন করে এটা যদি রিভাইসড করতে হয় সেটি করে সরকারের অনুমোদন নিয়ে দ্রুতই আমরা আবারও বিডিংয়ে যাবো। খবর জাগোনিউজ।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমে একটি কমিটি করে দেবো। কমিটি এক মাস বা দুই মাস স্টাডি করবে। আজ আবার অনশোরের জন্য একজন কনসাল্টেন্সি নিয়োগ করেছি। তাকে দিয়েও একটু দেখিয়ে নিতে পারি যে, কী জন্য এমনটা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, তারা কেন জমা দেয়নি কারণ আমাদের বলেনি। তবে আন-অফিসিয়ালি যদি কোনো তথ্য পাই তাদের থেকে সেগুলো আমরা রিভিজিট করবো।
চেয়ারম্যান মনে করে, আমার মনে হচ্ছে প্রাইসটা আমরা ১০ শতাংশ বের করেছিলাম, আমরা যখন জমা দেই তখন এটা ৯০ ছিল অর্থাৎ ৯ ডলার ছিল। আজ এটা ৭২ অর্থাৎ ৭.২। তাদের ইনভেস্টের জন্য এটা হেভি রকমের কম। এটিও হতে পারে বা আরও কোনো কারণ থাকতে পারে। আমরা একটা দ্রুত উদ্ঘাটন করে সরকারকে চিঠি দেবো।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। এরপর তিন বছর সময় নিয়ে নতুন পিএসসি-২০২৩ চূড়ান্ত করা হয়। সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপ চালিয়ে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছিল। দরপত্রে অংশ নিতে ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে।
গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি মিলে মোট ২৬টি ব্লক আছে বঙ্গোপসাগরে। এর মধ্যে ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া একইভাবে চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। এখন একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি।