সব হারিয়ে নিঃস্ব সাড়ে তিনশ জেলে পরিবার

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

নিজস্ব প্রতিবেদক »

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে সব সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন পতেঙ্গার সাড়ে তিনশ জেলে পরিবার। অন্যদিকে পতেঙ্গা রিং রোড এলাকার দেড় হাজার, আকমল আলী ঘাটেই ৫ শতাধিকের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাখাল দাশ নামক এক জেলে জানান, গতবছর মহাজন থেকে সুদের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে একটি কুঁড়েঘর বাঁধেন। সিত্রাংয়ের আঘাতে সব ল-ভ- হয়ে গেল। পরিবারের আয়ের একমাত্র সম্বল ছিল বোট, সেটিও উত্তাল সাগরে ভেসে যায়।

সমুদ্রে স্বামীহারা ৬৫ বছর বয়সী রাজিয়া খাতুন বলেন, ‘এই সমুদ্র ছেলের আগে ছেলের বাপরে খাইছে। এখন আমার থাকার ঠাঁইটাও ভাসায় নিয়ে গেল। আর কত সর্বনাশ করবে এই দইজ্জা। এখন পথে পথে ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই’।

রাখাল দাস ও রাজিয়া খাতুনের মতো বাড়িঘর গুঁড়িয়ে গেছে নগরের পতেঙ্গা রিং রোড এলাকার দেড় হাজার পরিবারের। এরমধ্যে আকমল আলী ঘাটেই ৫ শতাধিকের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সূত্রে জানা যায়, সাগর পাড়ে লিজের জায়গায় যারা নিজ উদ্যোগে ঘর তৈরি করেছে তাদেরকে মাসে ৫০০ টাকা ঘর ভাড়া আর ৫০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যারা শুধু ঘর ভাড়া নিয়েছেন তাদেরকে ১ হাজার টাকা ঘরভাড়া ও ৫০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। এভাবে দোকানপাটসহ প্রায় হাজারখানেক বসতি ছিলো বেড়িবাঁধে।

রিমন জলদাশ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। একটি বোট, ৫০টি টং জাল ঘরসহ সব সাগরে ভেসে গেছে। আমার মত এভাবে আরো ৭০ জন বদ্দারের ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জীবন রক্ষায় বেড়িবাঁধে আমরা পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

স্বামীহারা স্বপ্না জলদাস বলেন, হঠাৎ পানি আসাতে আমরা ছোট বাচ্চা নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে পারিনি। আমি পেশায় বাজারের জেলেদের মাছ বিক্রি করে চলি। পাঁচ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। এখন বাড়িঘর সব হারিয়েছি। খোলা আকাশের নিচে সন্তানদের নিয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই।

নগরীর ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহরের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘আমার এলাকায় সাড়ে তিনশ জেলে পরিবার আছে। তার মধ্যে ৮ থেকে ১০টি পরিবারের ঘরবাড়ি একদম বিলীন হয়ে যায়। আর বাকি পরিবারগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল বিকাল থেকে মাইকিং করেও তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরতে বললেও অনেকে সরেনি। তবু আমি নিজ উদ্যোগে গতকাল রাতে কলা, চিড়ে, মুড়ি দিয়েছি। আজ ( মঙ্গলবার) জেলা প্রশাসক থেকে তাদেরকে বিতরণের জন্য কিছু খাবার এসেছে তা আগামীকাল (আজ) বিতরণ করবো। আজ রাতে ৩০০ জনের খাবার পাঠাচ্ছি।

জেলে পরিবারগুলোকে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকে আমি কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি? প্রশাসনের তরফ থেকে যা দিচ্ছে আমি তা দিচ্ছি। নিজ চেষ্টায় যতটুকু পারি পাশে থাকছি। তবু আমি আজ রাত ৯টার দিকে যাবো। তাদের কি কি সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন তা জেনে আগামীকাল একটি নোট জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বরাবর পাঠাবো। এটি তো সরকারি উদ্যোগ, সরকারের তরফ থেকে আসতে হবে। একটি সিস্টেম তো আমাদের ফলো করতে হয়।

চট্টগ্রাম ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওর্য়াডের কাউন্সিলর আব্দুল বারেক বলেন, আমার এলাকায় তিনটি পাড়ায় মিলে প্রায় ১২’শ পরিবার আছে। তার মধ্যে একটি পরিবারেরও ক্ষতি হয়নি। সি বিচ এলাকায় সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আমরা ভোর চারটা পর্যন্ত ছিলাম। আজকে (মঙ্গলবার) তাদের ৭ টন চাল দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি এসে নিয়ে গেছে। আমার ওয়ার্ডের বাইরে ক্ষতি হলে হতে পারে।

অন্যদিকে, নগরের সমুদ্র উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, আগে কাউন্সিলর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা করে আমাদের দিতে হবে। কাউন্সিলরা তাদের তালিকা পাঠালে চসিকের তরফ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।