নিজস্ব প্রতিনিধি, মহালছড়ি »
গ্রাম্য বাজারগুলোতে পাহাড়ি নারীদের সবজি বিক্রেতার অবস্থান চোখে পড়ার মতো। দরিদ্র পরিবারের পাহাড়ি নারীরা দুর্গম উঁচুনিচু পাহাড় দিয়ে বন জঙ্গল থেকে বিভিন্ন সবজি আহরণ করে বিক্রি করতে দেখা যায়।
কেউ কেউ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন সবজি জাতীয় ফলমূল কিনে এনে বিক্রি করছেন। এসব বিক্রি করেই আয়ের টাকা দিয়ে তাঁদের সংসার চলে।
বলছি, মহালছড়ি উপজেলার সিঙ্গিনালা মহামুনি পাড়া গ্রামের একটি ছোট্ট গ্রাম্য বাজারের কথা। সিঙ্গিনালা বাজার নামেই সবার পরিচিত। এ বাজারে জুমে চাষ করা ফলমূল আর বন জঙ্গল থেকে আহরন করে নিয়ে আসা টাটকা সবজি বিক্রি হয়। এ ছাড়া পাশর্^বর্তী রয়েছে কাপ্তাই লেক। সেখান থেকে টাটকা ছোট বড় মাছ ধরে বিক্রি করে জেলেরা। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে সিঙ্গিনালা এসে ক্রেতারা ভিড় জমায়।
সরেজমিনে সিঙ্গিনালা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতাদের মধ্যে নারীরা সবচাইতে এগিয়ে। বেশির ভাগেই নারীরা কাঁচা তরকারি বিক্রি করেন।
সারা বছরই এখানে পাওয়া যায় বন-জঙ্গল থেকে আহরিত নানান ফল আর শাক-সবজি। মূলত দরিদ্র নারীরা সংসারের টানাপড়েন কমাতে বুনো সবজি সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রয়ের জন্য।
আর এসব ভেজালমুক্ত সবজি কিনতে ক্রেতারাই প্রতিদিন সকাল-বিকাল এ বাজারে ভিড় জামান। এ বাজারে বিক্রেতাদের মধ্যে হাতেগোনা দু’য়েকজন পুরুষ চোখে পড়লেও বেশীরভাগই সবাই নারী বিক্রেতা।
জুমে (পাহাড়ে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করা জমি) উৎপাদিত ফলমূল এবং বন জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা অল্প অল্প করে হলেও নানান জাতের সবজি নিয়ে বিকেলে বিক্রি করতে চলে আসেন তাঁরা।
সবজির মধ্যে বাঁশকুড়ল, তারাগাছ, কচুশাক, কচুলতি, কাঁচা-পাকা পেপে, থানকুনি পাতা থেকে শুরু করে কলার মোচা উল্লেখযোগ্য। যেগুলোর অধিকাংশই প্রকৃতি থেকে আহরিত শাক-সবজি।
সিঙ্গিনালা বাজারে সবজি কিনছিলেন নীল রঞ্জন চাকমা। তখন তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ এখানে বনের ভেজালমুক্ত শাক-সবজি তাই প্রতিদিন প্রয়োজন মতো কিনে নিয়ে যায়।’
নারী সবজি বিক্রেতা মেরিয়া মা বলেন, উঁচু-নিচু পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে ঝাড়-জঙ্গল থেকে সারাদিন বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি কুড়িয়ে এনে বিকেলে এ বাজারে বিক্রি করি। সবজি বিক্রি করে দৈনিক ২ শত থেকে ৩শত টাকা পান তিনি। এ টাকা দিয়েই পরিবারের খরচ যোগান দেন তিনি।
এ সিঙ্গিনালা বাজারে ভেজালমুক্ত শাক-সবজি কিনতে প্রতিদিন পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা ভিড় জমান।