নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাজারে যোগানের পাশাপাশি সরবরাহ বাড়লেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া সমুদ্রের মাছের যোগান বাড়লেও কমেনি দাম। ক্রেতার চাপ কম থাকলেও ব্রয়লার মুরগির বাজার এখনো বেশ চড়া। এদিকে কিছুটা কমতির দিকে ডিমের বাজার। প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের এমন অস¦াভাবিক দামে বাজার করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে নি¤œ-মধ্য আয়ের মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোন ধরনের সবজি ৬০ থেকে ৭০ টাকার নিচে মিলছে না। গত সপ্তাহের যে মানের সবজি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায় তা গতকাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার উপরে। দুই সপ্তাহ আগে যে বরবটি বিক্রি হয়েছিল কেজিতে ৬০ টাকায় তা গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। এতদিন যে মানের বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছিল তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকার উপরে। এরকম অনেক সবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তাছাড়া ঢেঁড়স, কাকরোল, ঝিঙ্গে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর গাজর ও কাঁচামরিচ বিক্রি ১৩০ টাকা থেকে ১৫৫ টাকা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. আলী আকবর হোসেন বলেন, ‘এতদিন ধরে মাছ, মাংস, ডিমের দাম বাড়তি থাকলে সবজি কিনে কোনমতে পরিবার নিয়ে চলেছি। এখন দেখছি সবজিও আর আমাদের মতো নি¤œ আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে নেই।’
বকসিরহাট বাজারে আসা হোসনে আরা নামের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘সবাই বলে, যেটির দাম বাড়বে সেটি কেনা ছেড়ে দিন। ছেড়ে দিতে দিতে মাছ, মাংস কেনা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। আগে বাচ্চার টিফিনে একটি ডিম দেওয়া হতো। এখন তাও বন্ধ করে দিয়েছি। এখন সবজির দাম চড়া। সবজি কেনাও ছেড়ে দিলে পরিবারকে কি খাওয়াবো?’
সবজির দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে বেশ কয়েকমাস ধরেই। খোদ বিক্রেতারাও তার স্বীকার করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘এত দীর্ঘসময় সব ধরনের সবজির এমন চড়া দাম আগে কখনোই ছিল না। এ বছর রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।’
তারা আরও বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ থেকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজি সরবরাহ হয়নি যার ফলে বাজারে সবজির কৃত্রিম সংকটের কারণে দাম বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে আবারো দাম কমে যাবে।’
এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে অস্থির হওয়া ডিমের বাজারে একাধিক অভিযান পরিচালনা হওয়ার পর কিছুটা কমতির দিকে। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৫৫ টাকা যা গত কয়েকদিন ধরে বিক্রি হয়েছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। তবে দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় ডিমের দাম বাড়তি রয়েছে ডজনপ্রতি ১৫ টাকার উপরে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ডিমের সরবরাহ বেড়েছে, আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তাছাড়া বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগিসহ অন্য মুরগি। ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা। দেশি মুরগি ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা।
স্থিতিতে রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজারে গরু বিক্রি হয়েছে কেজি ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। আর খাসি বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা ।
এদিকে বাজারে পর্যাপ্ত মাছের যোগান রয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সরবরাহও বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মাছের দাম কমেনি। ব্যবসায়ীরা বলেন, জেলেরা সমুদ্রে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়াতেই খরচের সাথে সমন্বয় করে কিছুটা বাড়তির দিকে মাছের বাজার।
বাজারে গত সপ্তাহের দামে লইট্যা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকার উপরে। তাছাড়া পোয়া ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা, কোরাল ৫২০ থেকে ৬০০ টাকা, রুপচান্দা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া মাঝারি সাইজের ইলিশের দাম হাজারের উপরে। আর কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চাষের মাছের দামও। বাজারে রুই, কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। আর পাঙ্গাস ও নাইলোটিকা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকার উপরে। বলা যায় ২০০ টাকার নিচে কোন মাছ বাজারে মিলছে না।
এদিকে, খুচরা বাজারে আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, রসুন ২১০ টাকা ও আদা ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ভোজ্যতেল খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ টাকা আর প্যাকেটজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা কেজিতে। তাছাড়া লবণ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়। মসলার বাজারে দাম অনেকটা গত সপ্তাহের বাজারের মতোই।