একটি জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো তার কৃতি সন্তানদের রেখে যাওয়া স্মৃতি। যে দেশের সুরের আকাশে সত্য সাহার মতো উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম হয়েছে, সে দেশের মানুষের কাছে তাঁর পৈত্রিক ভিটা একটি তীর্থস্থান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বরেণ্য এই সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি আজ অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের মুখে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে উঠে আসা তাঁর পৈত্রিক ভিটার জরাজীর্ণ চিত্রটি কেবল একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষ নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক উদাসীনতার এক করুণ দলিল।
সত্য সাহা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের অন্যতম কারিগর। তাঁর সৃষ্টি করা অসংখ্য কালজয়ী গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। অথচ যে বাড়িতে তাঁর বেড়ে ওঠা, যেখানে তাঁর সুরের হাতেখড়ি, সেই বাড়িটি আজ আগাছায় ঢাকা পড়ে বিলীন হওয়ার পথে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়ালগুলো নোনা ধরে জীর্ণ হয়ে গেছে। এই অবক্ষয় কেবল ইটের দেয়ালের নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত জাতীয় চেতনার দৈন্যদশা প্রকাশ করে।
সত্য সাহার মতো কিংবদন্তিরা একটি কালখণ্ডকে ধারণ করেন। তাঁর বাড়িটি সংরক্ষিত হলে পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গীতানুরাগীরা তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানার এক জীবন্ত ক্ষেত্র পাবে। তাই বাড়িটিকে সংস্কার করে সেখানে একটি সঙ্গীত গবেষণাগার, জাদুঘর কিংবা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা জাতীয় কর্তব্য। এতে স্থানীয় যুবসমাজ সুস্থ সংস্কৃতির চর্চায় উদ্বুদ্ধ হবে। চট্টগ্রামের এই ঐতিহাসিক ভিটাটিকে ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে, যা এলাকাটির গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উচিত অবিলম্বে এই বাড়িটির মালিকানা বা তদারকি গ্রহণ করা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব না হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। বাড়িটিকে ‘ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা’ হিসেবে ঘোষণা করে এর আদি স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে।
আমরা চাই না সত্য সাহার সুরের মতো তাঁর স্মৃতিগুলোও কেবল বাতাসের হাহাকারে হারিয়ে যাক। শেকড় ছিঁড়ে কোনো জাতি বেশিদূর এগোতে পারে না। আমরা কি পারি না আমাদের এই সুরস্রষ্টার স্মৃতিচিহ্নটুকু সযতনে রক্ষা করতে?




















































