নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্লাজায় আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পরিষদের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে দেশি-বিদেশি আলোচকরা বলেছেন, মসনদ বা ক্ষমতায় বাসার জন্য নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা ময়দানে ইয়াজিদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হননি। দুরাচারী ইয়াজিদ গায়ের জোরে মসনদ দখল করে মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ ও ব্যভিচারকে বৈধতা দিয়েছিল। তাই তাকে মেনে নিতে পারেননি হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। ইয়াজিদি অপশাসন দুর্বৃত্তায়ন থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়াই ছিল হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর বিদ্র্রোহের পিছনে মূল কারণ।
বক্তারা বলেন, দেশ ও সমাজে বিরাজিত যাবতীয় অনাচার অবিচার শোষণ জুলুম রুখে দিয়ে সত্য ন্যায়নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করাই শাহাদাতে কারবালার অন্তর্নিহিত দর্শন। গতকালের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ মুহাম্মদ মহসিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মুখ্য আলোচক ছিলেন ভারত থেকে আগত আন্তর্জাতিক ইসলামী স্কলার তাজুল ওলামা আল্লামা সৈয়দ নুরানী আশরাফ আশরাফি আস সিমনানি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে আলহাজ সূফি মিজানুর রহমান বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) মহব্বতকে অন্তরে গভীরভাবে ধারণ করতে পারলে ইহজীবনে কল্যাণ, পরিপূর্ণ কামিয়াবি ও পরকালে নাজাত মিলবে। মাত্র একশ টাকা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে কঠোর পরিশ্রম, কর্মনিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে আজকের এই সাফল্য ধরা দিয়েছে উল্লেখ করে সূফি মিজানুর রহমান বলেন, জীবনে সাফল্য চাইলে কঠোর মেহনত করতে হবে। লক্ষ্য পৌঁছুতে কাজে লেগে থাকতে হবে। মানুষের কল্যাণ করা, অকাতরে দান করা, ঋণের ভারে জর্জরিত অসহায় মানুষকে ঋণ পরিশোধে এগিয়ে আসার মাধ্যমে পুণ্যময় জীবন গঠনের তাগিদ দেন তিনি।
বিদেশি আলোচক আল্লামা সৈয়দ নূরানি আশরাফ আশরাফি আস্ সিমনানি বলেন, আহলে বায়তে রাসূল (দ.) ও সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। তাদের অনুসরণ অনুকরণের মাধ্যমে নাজাতের পথ সুগম হবে। বাংলাদেশে চট্টগ্রামে এসে এ ধরনের শানদার কারবালা মাহফিল দেখে তিনি অভিভূত ও মুগ্ধ বলে উল্লেখ করেন।
মাওলায়ে কায়েনাত শেরে খোদা হযরত আলী (রা.) এর মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী। তিনি বলেন, হযরত আলীর (রা.) জন্মই হয়েছে কাবা শরিফের ভেতরে। তাঁর শান মর্যাদা অতুলনীয়। তাঁকে নিয়ে কটূক্তি করলে ঈমানহারা হতে হবে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হযরত ওমর ফারুক (রা.), হযরত ওসমান (রা.) এবং হযরত আলী (রা.) অশেষ মর্যাদার অধিকারী। বিশেষ করে সকল জটিল কঠিন বিষয়ে ফয়সালা দিতেন হযরত আলী (রা.)। সব সাহাবাকে সম্মান করাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা। এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিল থেকে এই বার্তাই আমরা বিশ^বাসীকে জানিয়ে দিতে চাই।
আজমতে সাহাবা নিয়ে আলোচনা করেন খতিবের হাট জামে মসজিদের খতিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, আজ কিছু নিন্দুক সাহাবায়ে কেরামের মান মর্যাদায় আঘাত হানছে। অথচ সকল সাহাবা পূত-পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী। আবার যারা অতি ভক্তি দেখিয়ে হযরত আলী (রা.) কে নিয়ে মিথ্যাচার করে তারাও পথভ্রষ্ট। এদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, জমিয়তুল ফালাহর আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের মাধ্যমে নবী ওলীপ্রেমী ও আহলে বায়তপ্রেমীরা ঈমান আক্বিদাকে শাণিত করার সুযোগ পাচ্ছে। এ মাহফিলের সূচনার জন্য খতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরী (রা.) ও রূপকার সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করেন তিনি। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী আহমদ বিন ইউসূফ আল আজহারী।
মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র মহাসচিব আলহাজ শাহজাদ ইবনে দিদার, মহানগর সভাপতি আলহাজ তসকির আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। মাহফিল সঞ্চালনা করেন ড. জাফর উল্লাহ।
উপস্থিত ছিলেন মহফিলের প্রধান সমন্বয়ক পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আলহাজ মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের খোরশেদুর রহমান, সিরাজুল মুস্তফা, সৈয়দ সেহাব উদ্দিন আলম, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, আব্দুল হাই মাসুম, দিলশাদ আহমদ, সৈয়দ মুহামদ সিরাজ উদ্দৌলা, এস এম শফি, আলহাজ মুহাম্মদ ইদ্রিচ চেয়ারম্যান, আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, মাহাবুবুল আলম, মনসুর সিকাদার, মাইনুদ্দীন মিঠু, ফরিদ মিয়া, শাহাব উদ্দিন, জহির উদ্দিন, খোরশেদ আালী চৌধুরী, নাজিব আশরাফ প্রমুখ। ৬ষ্ঠ দিবস থেকে পর্দা সহকারে মহিলাদের মাহফিলে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে।