সুপ্রভাত ডেস্ক
দেশের রফতানি আয়ে ৮৪ শতাংশ অবদান পোশাক খাতের। এ খাতের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। ৪ এপ্রিল রোববার সংগঠনটির নির্বাচন। এই নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফোরাম এবং সম্মিলিত পরিষদ নামে দুটি প্যানেল নির্বাচন করবে। এবারের নির্বাচনে ফোরাম মনোনীত প্যানেল লিডার এবিএম শামসুদ্দিন-এমডিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর পক্ষে পরিচালক পদে নির্বাচন করছেন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি ও চিটাগাং এশিয়ান অ্যাপারেলস লিমিটেডের কর্ণধার এমএ সালাম। তাঁর ব্যালট নম্বর ২৮। বর্তমান সভাপতি রুবানা হকও এই প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন ২ হাজার ৩১৩ জন তৈরি পোশাকশিল্প মালিক। তাদের মধ্যে ঢাকার ১ হাজার ৮৫২ ও চট্টগ্রামের ৪৬১ জন। ফোরামের ব্যালট নম্বর ১-৩৫।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম বলেছেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে পোশাক খাতে কাজ করে আসছি। বিজিএমইএ’র ১৯৯৪-৯৫ সালের নির্বাচনে প্রথম পরিচালক হই। পরবর্তীতে মোট ৬ বার পরিচালক ছিলাম। এবার ড. রুবানা হকের নেতৃত্বে আমি বিজিএমইএ চট্টগ্রামের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বিজিএমইএ’তে আসার পর ৫ থেকে ৬ জন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। অনেক দিনের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তখন আমার ব্যবসা অনেক ছোট ছিল, আস্তে আস্তে ব্যবসা বড় হয়েছে। ব্যবসা বড় হওয়ার সাথে সাথে আমি নেতৃত্বেও ছিলাম বিজিএমইএতে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি কাজ করার সময় অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে মাত্র ২০০ মেশিনের কাজ ছিল আমার। তখন আমার কর্মচারী ছিল সাড়ে ৫০০ জন। এখন এসে আমার প্রতিষ্ঠানের রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। তাদেরকে দেখভাল করছি। এটা হয়েছে বিজিএমইএ’র সাথে সম্পৃক্ত থাকায়। এজন্য আমার জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে। আমি নেতৃত্বে থাকাকালে মেম্বারদের জন্য অনেক কাজ করেছি। ক্যাপ্টেন সিনহার আমলে ব্যাংকের অনেক কাজ করেছি। আনিস সাহেবের সাথে কাজ করেছি, এতে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ মাফ করতে পেরেছি। এরপর এসে আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজের সাথেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
এম এ সালাম বলেন, ২০২০-২০২১ এ ২ বছর আমি মনে করি আমার জীবনের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বছর। কারণ এবার যে ধাক্কা এসেছে, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য এসেছে। যেভাবে প্রত্যেকটা সেক্টরে লেগেছে, আমাদের উপর ধাক্কাটা বেশি লেগেছে। করোনা প্রথমে শুরু হয় চায়নাতে। তখন সেখানে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এ কারণে আমাদের মালামালগুলো শিপমেন্ট হয়নি। এ ২ মাস শিপমেন্ট না হওয়ায় মার্চ-এপ্রিলে কাঁচামাল একদম শূন্য হয়ে যায়। এ অবস্থায় তখন কেউ চিন্তা করেনি যে করোনার প্রভাব বাংলাদেশে আসবে। ওই সময়ে আমি বন্দরের সাথে আলাপ করেছি আমার বিজিএমইএ টিম নিয়ে। কয়েকটি মিটিংও করেছি তাদের সাথে। করোনা মহামারির মধ্যে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ২৭ থেকে ৩১ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে। আবার লকডাউনের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ মে’র মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি আমরা। কারণ আমাদের শ্রমিকরা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। এ নীতিতে আমরা সবসময় বিশ্বাস করি। এজন্য ধন্যবাদ দিতে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি লকডাউনের সাথে সাথে ঘোষণা করেছিলেন আমাদের সেক্টরের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা। এটা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য একমাত্র আশা ছিল। এরপর তা ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে তা ৪ মাসের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার শর্তে। এ টাকা ২ বছরের মধ্যে স্বল্পসুদে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এরপর বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি নিশ্চিত করে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। একইভাবে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, কীভাবে করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষা রাখা যায়। আর প্রত্যেকটি ফ্যাক্টরিতে হেলথ প্রটোকল নিশ্চিত করেছি আমরা।
বিজিএমইএ নেতা সালাম বলেন, আগামী ৪ থেকে ৫ মাস এ সেক্টরে খুব খারাপ অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। কারণ ইউরোপ ৬ মাস বন্ধ ছিল। এখন অল্প অল্প চালু হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ ব্যবসা কম হয়েছে। তাই এ সময়ে করোনা মোকাবেলা করে ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য ফ্যাক্টরিগুলোকে কমফোর্ট দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ’র নির্বাচনের মাধ্যমে এবার নেতৃত্বে যেই আসুক, আগামী ৫ থেকে ৬ মাস শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এ শিল্পের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই সবকিছুর আগে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। তবে আমি মনে করি ড. রুবানা হকের সমর্থিত প্যানেল ফোরাম সকল সংকটে আপনাদের পাশে থাকবে।
বিজনেস