সংস্কার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হলেই নির্বাচন: রিজওয়ানা হাসান

ইসকন নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের মধ্যে কোনও আলাপ হয়নি

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান ও মাহফুজ আলম এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেশের প্রধান দুটি দল বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের আলোচনাসহ নানা বিষয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠে এসেছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টারা বলেছেন, সংস্কার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হলেই নির্বাচন আয়োজন করবে সরকার। বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান ও মাহফুজ আলম। এসময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনের কথা বলেছে

ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনের কথা বলেছে। নির্বাচনী উদ্যোগ হিসেবে সার্চ কমিটি হয়েছিল, কমিশন গঠন হয়েছে, কমিশনাররা শপথ নিয়েছেন এবং অন্যান্য কার্যক্রমও চলমান আছে। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ যেজন্য জীবন দিয়েছেন সেই সংস্কারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া হওয়ার পরই নির্বাচন হবে। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলো আসুক। আর নির্বাচন কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, তারা ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ যা যা কাজ আছে তা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর ঠিক হবে।’

এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ছয়টি কমিশনকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তাবনা পেশ করার সময় দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ ডিসেম্বরেই দিতে পারবেন কেউ কেউ দুই-এক সপ্তাহ বেশি সময় নেবেন। এই সংস্কারগুলোর সঙ্গে নির্বাচনের একটি সম্পর্ক আছে। প্রস্তাবগুলো আসবে, জনগণ সেগুলো নিয়ে কথা বলবে। এরপর চূড়ান্ত একটা সংস্কার প্রস্তাবনা হবে। সে মোতাবেক সংস্কার কাজে ব্যবস্থা নেব আমরা।

নির্বাচনের প্রাথমিক কাজ হয়ে গেছে

রিজওয়ানা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলোচনা হচ্ছে তা বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ হচ্ছে। তারা যে কথাগুলো বলছেন, আমরা যা বলছি তাতে বোঝা যাচ্ছে পারস্পারিক আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বারবার বলছি, যত দ্রুত সম্ভব জরুরি সংস্কারের কাজ শেষ করে আমরা নির্বাচনের তারিখ জানিয়ে দেব। তারা নির্বাচনের কথা বলছেন একই সঙ্গে সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাবও দিচ্ছেন। আর নির্বাচন করার প্রাথমিক কাজ কিন্তু হয়ে গেছে, এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তবে দলগুলোর পক্ষ থেকে একটি সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, আমরা সেটি পারছি না কারণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো এলে বলা যাবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে ঠিক কতটুকু সময় লাগবে।’

অন্তবর্তী সরকার রাজনৈতিক চাপে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব নিলে নানামুখী চাপ নিতেই হবে। নির্বাচন কমিশন করতে হবে তাই করা হয়েছে। এটি নিয়মতন্ত্রের বিষয়, কারও চাপে করা হয়নি। চাপ ঠিক নয়, দাবি ছিল নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ দেওয়ার। কমিশন ঘোষণাটি কোনো চাপের বিষয় নয়, সরকারের কাজেরই অংশ।’

ইস্কন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি

ইস্কন নিষিদ্ধ করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, বাংলাদেশে কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ করা বা নিবন্ধন বাতিল করার মতো যেকোনো আইনি উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আমরা করতে চাই, যাতে কোনো পক্ষের দিক থেকে অনিশ্চয়তা বা সংকট তৈরি না হয়। সুষ্ঠু তদন্তের পর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে উপদেষ্টা কাউন্সিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এ বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কোন সংস্থা নিষিদ্ধের আলোচনা সরকারে হয়নি। দাবি অনেকই তুলতে পারে, দাবির সপক্ষে মানুষ কর্মসূচিও দিতে পারে। ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে সংস্থার অপরাধকে আমরা জড়িয়ে ফেলছি না। একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইস্কনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’

অপর প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘এটি গণঅভ্যুত্থানের সরকার, সবারই এখানে দায়িত্ব রয়েছে। রাজনৈতিক দল, জনগণ বা সরকার এখানে আলাদা কিছু নয়। বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার এই কাজটি সবার। এই ঐক্য ধরে রাখলে আশা করি, আর কখনও ফ্যাসিজম ফিরে আসবে না।’