সুপ্রভাত ডেস্ক »
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জিহাদ হাওলাদারকে। তিনি পেশায় কসাই। বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা এই জিহাদই সাংসদ সদস্যকে খুনের পর টুকরো টুকরো করেছিল।
খুনের নেপথ্যে অভিযোগের তীর আজীমের বন্ধু ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামান শাহিনের দিকে। তাকেই সংসদ সদস্য আজীম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এই আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই।
কলকাতার সংবাদ প্রতিদিন ও আনন্দবাজার পত্রিকাসহ একাধিক গণমাধ্যম পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির বরাত দিয়ে সংবাদ করেছে। সেখানকার সিআইডি সূত্রের খবর, জিহাদ জেরায় স্বীকার করেছে সে ও আরও চারজন বাংলাদেশি নাগরিক মিলে সংসদ সদস্যকে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে খুন করে।
শুক্রবার সকালে জিহাদকে বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়েছে। সেখানে ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে চাইবেন গোয়েন্দারা।
বারাসত আদালতে জিহাদকে হাজির করানো হলে তাঁকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকেরা। একটাই প্রশ্ন উড়ে আসতে থাকে চারদিক থেকে, ‘‘কেন মারলে?’’ জিহাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে তিনি আদালতে ঢুকে যান। কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি।
সিআইডি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করার পর জিহাদকে ভাঙড়ের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজীমকে খুনের পর সেখানেই দেহাংশ ফেলা হয়েছে বলে জেরায় উঠে এসেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে কোনও দেহাংশই মেলেনি। তাই শুক্রবার জিহাদকে দেহাংশ উদ্ধারের প্রয়োজনেই হেফাজতে চাইতে পারে সিআইডি।
গোয়েন্দারা এখনও নিহত সাংসদের কোনও দেহাংশ খুঁজে পাননি। ফলে ধৃতদের জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এ ক্ষেত্রে, অভিযুক্তেরা কোনও ভাবে তদন্তকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। সেই সূত্রেই জিহাদকে হেফাজতে প্রয়োজন। সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থেই তাঁকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চাওয়া হতে পারে।
সিআইডি সূত্রে খবর, হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। শিলাস্তি রহমান নামের এক মহিলাকে সামনে রেখে তাঁকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউ টাউনের ওই আবাসনে। তার পর সেখানে তাঁকে খুন করা হয়। ধৃত জিহাদের বিরুদ্ধে খুনের জন্য অপহরণ, তথ্য নষ্ট করা, ভুল তথ্য দেওয়া, খুন এবং অপরাধের চক্রান্ত করার ধারা যোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। আনোয়ারুল আজীম হত্যার ঘটনায় ঢাকায় যে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের একজনের নাম সৈয়দ আমানুল্লাহ। তাঁর পাসপোর্টে এই নামই লেখা ছিল। পুলিশ বলছে, এই খুনের জন্য তাঁকে ভাড়া করা হয়েছিল।
পরে জানা গেছে, আমানুল্লাহর প্রকৃত নাম শিমুল ভূঁইয়া। তিনি খুলনা অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী, এক সময়কার চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) অন্যতম শীর্ষ নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে খুনসহ ২৫টির মতো মামলা আছে।
গ্রেপ্তার হয়েছেন তানভীর ভূঁইয়া। তানভীর হলেন শিমুল ভূঁইয়ার বড় ভাই লাকী ভূঁইয়ার ছেলে। শিলাস্তি রহমান নামে যে নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডির একটি দল বৃহস্পতিবারই ঢাকায় গিয়েছে। ধৃতদের সেখানেও জেরা করা হবে। সিআইডি জানতে পেরেছে, খুনের অন্তত দু’মাস আগে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল কসাই জিহাদকে।
জেরার মুখে জিহাদ স্বীকার করেছেন, প্রথমে আজীমকে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয়। তার পর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তেরা। যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত, কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড, তা জানতে জিহাদকে হেফাজতে চাওয়া হতে পারে।