সুপ্রভাত ডেস্ক »
সংস্দ ভেঙে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।
সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগাম জাতীয় নির্বাচনের এ ঘোষণা দেন তিনি।
এদিন রাতে বঙ্গভবনে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত করা হবে।
”গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা হবে।”
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তৃতীয়বারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। দলের প্রধান শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এই সরকারের মেয়াদ সাত মাস হওয়ার মধ্যেই কোটা সংস্কারকে ঘিরে গড়ে ওঠা তুমুল গণ আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটে।
সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের দ্বিতীয় দিন ঢাকামুখী লং মার্চ কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার রাজপথে নেমে আসার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন।
এরপর বিকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সেনা সদরে জনগণের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা জানান।
রাতে বঙ্গভবনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।
এ বৈঠক শেষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ”প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
”প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার সৃষ্ট প্রেক্ষিতে তিন বাহিনীর প্রধান, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়।”
তিনি বলেন, “সভায় জরুরিভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, ”বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটকসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সভায় বৈঠকে সর্বসম্মতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বক্তব্যে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থানকে স্বাভাবিক করতে ও লুটপাট কিংবা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডকে বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদকে রক্ষা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করছি। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দেশের অর্থনীতি, কলকারখানা ও প্রশাসন চালু রাখার লক্ষ্যে সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, “ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া হত্যা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে দেশের সব অফিস আদালত স্বাভাবিক সময়ে চলবে।
রাষ্ট্রপতি দেশকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।