দেশের সংবাদপত্রশিল্প এখন বড় সংকটে। মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের এক টনের দাম ৫৭০ মার্কিন ডলার থেকে ১ হাজার ডলার হয়েছে। এ কারণে এ শিল্প এখন রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রচারসংখ্যা ও বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ায় কমে গেছে আয়।
উন্নতমানের কাগজ আমদানি করা হয় রাশিয়া, কোরিয়া থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাগজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন হলো সংবাদপত্রের মূল আয়। কিন্তু কোভিডের পর তাও কমে গেছে। বিজ্ঞাপনের আয়ের ওপরও কর দিতে হয়। আবার সরকারের কাছে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিল বকেয়া আছে।
ছাপা পত্রিকার পাঠক কমলেও অনলাইনের পাঠক বাড়ছে। শেষ বিচারে ছাপা পত্রিকা ছেড়ে ডিজিটালে যেতে হচ্ছে। এজন্য আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন হচ্ছে।
শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, সংবাদপত্র একটি শিল্প। এছাড়া ২০১৪ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় সংবাদপত্রকে সেবাশিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্র একটি রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। সেবা শিল্প ও রুগ্ন শিল্প হিসেবে ধরলেও সরকারের কাছ থেকে কোনো রকমের সুবিধা-সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এমনকি করোনাকাল এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে যেখানে বিভিন্ন শিল্পকে নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে সংবাদপত্রকে সহায়তা করা হয়নি বা চেষ্টাও হয়নি।
সংবাদপত্রের বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের আরোপিত কর প্রত্যাহার বা কমানো একান্তই জরুরি। সংবাদপত্রের ওপর আরোপিত করপোরেট কর এখন ৩০ শতাংশ। সংবাদপত্রের মতো রুগ্ন শিল্পের ওপর কর যদি আরোপ করতেই হয় তাহলে সেটি ১০ শতাংশ হতে পারে। সংবাদপত্রের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট। প্রধান ব্যয় এ নিউজপ্রিন্ট, যা মোট খরচের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। কিন্তু কাস্টমস প্রসিডিউর কোড তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকায় নিউজপ্রিন্টের আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। সরকার চাইলে এটি বাদ দিতে পারে। অন্যদিকে নিউজপ্রিন্টের ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর (১৫ শতাংশ) এবং অগ্রিম আয়করসহ (৫ শতাংশ) সব মিলিয়ে কর দিতে হয় প্রায় ১৩০ শতাংশ। তাই আমদানি শুল্ককে শূন্য করা উচিত। আবার সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ।
বর্তমানে সংবাদপত্র শিল্প টিকে থাকার অবস্থায় নেই। সংবাদপত্রশিল্প বাঁচাতে আগামী বাজেটে নিউজপ্রিন্টে আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট অব্যাহতি জরুরি হয়ে পড়েছে।
মতামত