নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি মাদ্রাসায় দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় ৭ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৪/১৫ জন রোহিঙ্গা। এ সময় মুজিবুর রহমান নামে একজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছেন ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
গতকাল শুক্রবার ভোরে উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক এইস ৫২ এর ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন সেখানে দায়িত্বরত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান।
হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ক্যাম্প-১২ ব্লক-জে ৫ এর মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ইদ্রীস (৩২), ক্যাম্প-৯ এর ব্লক-২৯ এর ইব্রাহীম হোসেন (২২), ক্যাম্প-১৮ এর ব্লক-এইস ৫২ এর আজিজুল হক (২৬) ও মো. আমীন (৩২)। এছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ৩ জনের। তারা হলেন, ক্যাম্প-১৮ এর বাসিন্দা মাদ্রাসা শিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫), ক্যাম্প-২৪ এর বাসিন্দা হামিদুল্লাহ (৫৫) ও ক্যাম্প-১৮এর ব্লক এইস ৫২ এর মাদ্রাসা ছাত্র নুর কায়সার (১৫)।
ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে খুন হয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ। মুহিবুল্লাহ খুনের পর রোহিঙ্গা শিবিরে বিরাজ করে থমথমে অবস্থা। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের জন্য শুরু হয় প্রশাসনের ধরপাকড়। আল-ইয়াকিন, আরশাসহ নানা জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত কিছু দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গা প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হয়। তাদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে সহযোগিতা দিয়েছেন এমন অভিযোগে উক্ত মাদ্রাসায় হামলা করা হয়েছে।
এদিকে হামলার পর প্রশাসন ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও যে কোন মুহূর্তে বড় রকমের ঘটনার আশংকা করছেন অনেকেই। জঙ্গি সংগঠনের নানা তৎপরতায় মূলত সাধারণ রোহিঙ্গারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান বলেন, ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে এফডিএমএন ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায়। হামলায় মাদ্রাসায় অবস্থানরত ৪ জন রোহিঙ্গা মারা যায়। এ ঘটনা জানতে পেরে ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হলে আরও ৩ জন হাসপাতালে মারা যায়। এসময় পুলিশ হামলাকারীদের একজনকে অস্ত্রসহ (একটি দেশীয় লোডেড ওয়ান শুটারগান, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরি) সহ হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এপিবিএন এর এক বার্তায় হামলাকারীদের বর্ণনা করা হয়েছে ‘রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারী’ হিসেবে। সেখানে বলা হয়, হামলায় ঘটনাস্থলেই চার রোহিঙ্গা নিহত হন। খবর পেয়ে ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে বাকিদের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়ভাবে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায় ওই মাদ্রাসার মেঝেতে রক্ত ছড়িয়ে আছে। নিহতদের স্বজনরা সেখানে বিলাপ করছেন। একটি ছবিতে মাদ্রাসার পাশে কারও হাতে কাটা পড়া দুটো আঙুল পড়ে থাকতে দেখা যায়।