সংকটে বিদ্যুৎ খাত উত্তরণের উপায় কী

শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমলেও তার কোনো সুফল পাচ্ছে না দেশের মানুষ। বিশেষ করে চট্টগ্রামে লোডশেডিং এখন নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং দিনদিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনের বড় একটি সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে নগর ও গ্রামের মানুষকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হলো নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্যাদি বলছে, দেশের বিদ্যুৎ খাত এক গভীর সংকটের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে। একদিকে পিডিবির বিশাল অংকের লোকসান, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান সিস্টেম লস এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চরম স্থবিরতা—সব মিলিয়ে এই খাতটি এখন অর্থনীতির জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

​বিগত কয়েক বছরে বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান কমেনি, বরং পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্র ভাড়া। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

​এর সাথে যুক্ত হয়েছে সিস্টেম লসের পুরোনো ক্ষত। কারিগরি ত্রুটি এবং অবৈধ সংযোগের কারণে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, তার আর্থিক মূল্য বিশাল। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সুশাসনের অভাবই এই সিস্টেম লস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার প্রধান কারণ। সাধারণ গ্রাহক যখন উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনছেন, তখন এই অপচয় ও অব্যবস্থাপনার দায় কেন তাঁদের কাঁধে চাপানো হবে, সে প্রশ্ন তোলা এখন সময়ের দাবি। এ ছাড়া বিদ্যুৎখাতে বিশাল দুর্নীতিকে সিস্টেম লস বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

​জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে বিশ্বজুড়ে এখন নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও বাস্তবে এর চিত্র হতাশাজনক। বর্তমানে মাত্র ৩-৪ শতাংশ বিদ্যুৎ আসছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। জমি সংকট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি অতি-নির্ভরতা এই খাতের অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে রেখেছে। যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাচ্ছে, সেখানে আমাদের এই পিছিয়ে থাকা নীতিগত ব্যর্থতারই নামান্তর।

​বিদ্যুৎ খাতকে রাজনৈতিক বিবেচনায় না দেখে একটি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত খাত হিসেবে দেখা জরুরি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে জনগণের করের টাকা এভাবে লোকসানের খাদে পড়তে থাকবে, যা দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে।