নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম নগরীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আরও একজনের মৃত্যূ হয়। এর আগে বেলা তিনটার দিকে নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
নিহত দুজন হলেন ওয়াসিম আকরাম (২২) ও ফারুক (৩২)। ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায়। সে নগরীর বহদ্দারহাটে থাকতো। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী। তার বাড়ি কুমিল্লায়। এ ছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স ২৪। তার পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। অন্যদিকে ফারুকের বুকে গুলি লাগে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। তিনি বলেন, তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মধ্যে তিনজন মারা যায়। আহত আরও ৯ জন আছে। এর মধ্যে ফারুক নামের একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।
মঙ্গলবার বিকালে নগরীর মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী তারেক আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতালে দুইজনের লাশ মুরাদপুর ও ষোলশহর এলাকা থেকে আনা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নুজহাত ইনু জানান, ওয়াসিমকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং ফারুককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়েছিল।
এদিকে সংঘাতে আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের মাহবুব (২২) ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাঈনুল হক (২৩)।
করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় আহত আরও অন্তত ৬০ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এদিন দুপুরে ষোলশহর রেল স্টেশনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে ছিলেন সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আন্দোলনকারীরা ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে মুরাদপুর মোড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন।
পরে দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সড়কে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরুর আগেই হামলা করেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা শুরুতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করলেও পরে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ শুরু হয়। কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তারাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।
তবে ছাত্রলীগের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকায় তারা প্রতিহত করেছেন।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।