স্পোর্টস ডেস্ক »
শেষ ওভারে প্রয়োজন ৭। ক্রিজে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটি। অন্য প্রান্তে থাকা ওয়েন মর্গ্যানের ব্যাট রান নেই আইপিএলজুড়ে। সাকিব আল হাসান বুঝে নিলেন, দায়িত্ব নিতে হবে তারই। ড্যান ক্রিস্টিয়ানের স্লোয়ারে দুর্দান্ত স্কুপ শটের বাউন্ডারিতে তিনি মুছে দিলেন দলের সব শঙ্কা। পরের তিন বলে সিঙ্গেলে কলকাতা নাইট রাইডার্স পৌঁছে গেল জয়ের ঠিকানায়। আইপিএলে বিরাট কোহলির নেতৃত্বের অধ্যায় শেষ হলো ট্রফি ছাড়াই।
এলিমিনেটর ম্যাচে সোমবার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৪ উইকেটে জয় পায় কলকাতা। শারজাহর খানিকটা মন্থর উইকেটে বেঙ্গালোরের ১৩৮ পেরিয়ে যায় তারা দুই বল বাকি থাকতে।
নতুন বলে বোলিং শুরু করে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২৪ রান দেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে সাকিব আটে নেমে ৬ বলে খেলেন ৯ রানের ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
ম্যাচের নায়ক অবশ্য আরেক স্পিনিং অলরাউন্ডার সুনিল নারাইন। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২১ রানে নেন তিনি ৪ উইকেট। পরে ব্যাটিংয়ে দলের চাপের মধ্যে পাঁচে নেমে খেলেন ৩ ছক্কায় ১৫ বলে ২৬ রানের মহামূল্য ইনিংস।
নারাইনের অমন ইনিংসের পরও শেষ দিকে চাপে পড়ে যায় কলকাতা। তিন বলের মধ্যে নারাইন ও দিনেশ কার্তিককে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ সিরাজ। সেই সময়েই উইকেটে যান সাকিব, কলকাতার তখন প্রয়োজন ১৪ বলে ১৩।
১৯তম ওভারে জর্জ গার্টনের দুটি বল খেলে সাকিব নেন দুটি সিঙ্গেল। সেই ওভারে দুটি ডট বল খেলা মর্গ্যান ৪ বলে করতে পারেন ৩।
২০তম ওভারে ক্রিস্টিয়ানের প্রথম বলে অফে অনেকটা সরে গিয়ে চমৎকার স্কুপে শর্ট ফাইন লেগের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। তাতে ম্যাচ চলে আসে কলকাতার মুঠোয়। চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে সাকিবই শেষ করেন ম্যাচ।
ম্যাচের শুরুটাও ছিল তার হাত ধরেই। টসের জিতে ব্যাটিং নিয়ে বিরাট কোহলি বলেন, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। সেই উইকেটেই ম্যাচের প্রথম ওভারে সাকিবের হাতে বল তুলে দেন মর্গ্যান।
প্রথম তিন বলে আসে তিনটি সিঙ্গেল। পরের দুটি বল কোহলিকে ডট খেলান সাকিব। ষষ্ঠ বলে হজম করেন চার। ওভার থেকে আসে ৭ রান।
পাওয়ার প্লেতে বেঙ্গালোর তোলে ১ উইকেটে ৫৩ রান।
পাওয়ার প্লের পরপরই বোলিংয়ে ফিরেন সাকিব। তিন ওভারের স্পেলে প্রথম দুটিতে দেন কেবল চার রান করে। শেষ ওভার হয় একটু খরুচে, ম্যাক্সওয়েলের এক বাউন্ডারিতে আসে ৯ রান।
সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি ঠিক মতো খেলতে পারেননি শ্রিকার ভারত। ক্যাচের মতো উঠে যায়, কিন্তু লং অনের ফিল্ডার দৌড়ে আসার আগেই মাটি স্পর্শ করে বল। পরের বলে লকি ফার্গুসনের থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগলেও অল্পের জন্য রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান কোহলি।
পঞ্চম বলে আবার ক্যাচের মতো ওঠে। অফ স্টাম্পের বল ফ্লিক করেন ভারত। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে ক্যাচের মতো গেলেও একটুর জন্য নাগাল পাননি কাভারের ফিল্ডার মর্গ্যান।
পরের ওভারে আসে চারটি সিঙ্গেল।
লাইন, লেংথ ও গতিতে বারবার পরিবর্তন এনে ব্যাটসম্যানদের ভাবনার মধ্যে রাখেন সাকিব। এই দুই ওভার মিলিয়ে ভারতকে খেলান তিনটি ডট বল। রানের জন্য ছটফট করা এই ব্যাটসম্যান পরে সুনিল নারাইনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন সীমানায়।
সাকিবের কোটার শেষ ওভারে রিভার্স সুইপ করে চার মারেন ম্যাক্সওয়েল। ওভারটি থেকে আসে ৯ রান।
আগামী বুধবার ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের মুখোমুখি হবে কলকাতা। জয়ী দল শুক্রবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোর: ২০ ওভারে ১৩৮/৭ (পাডিক্কাল ২১, কোহলি ৩৯, ভারত ৯, ম্যাক্সওয়েল ১৫, ডি ভিলিয়ার্স ১১, শাহবাজ ১৩, ক্রিস্টিয়ান ৯, হার্শাল ৮*, গার্টন ০*; সাকিব ৪-০-২৪-০, মাভি ৪-০-৩৬-০, বরুন ৪-০-২০-০, ফার্গুসন ৪-০-৩০-২, নারাইন ৪-০-২১-৪)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৯.৪ ওভারে ১৩৯/৬ (শুবমান ২৯, ভেঙ্কটেশ ২৬, রাহুল ৬, নিতিশ ২৩, নারাইন ২৬, কার্তিক ১০, মর্গ্যান ৫*, সাকিব ৯*; সিরাজ ৪-০-১৯-২, গার্টন ৩-০-২৯-০, হার্শাল ৪-০-১৯-২, চেহেল ৪-০-১৬-২, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২৫-০, ক্রিস্টিয়ান ১.৪-০-২৯-০)
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম