সুপ্রভাত ডেস্ক »
পলায়নের মনোবৃত্তি আওয়ামী লীগের নেই বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখেছেন, ভোট চুরির কারণে দুইবার যাদের নির্বাচন বাতিল হয়েছে, তাদের মুখে এত লম্বা কথা আসে কীভাবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষকলীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘মা খালেদা জিয়া এতিমের আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারী, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি। সেই আসামি যে দলের নেতা, তাদের মুখে বড় বড় কথা। আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। তোরা তো পালাইয়া আছিস। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এত লম্বা কথা আসে কোথা থেকে?’ খবর বিডিনিউজের।
আন্দোলনের নামে গাড়ি পোড়ানোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। আবার দেখলাম তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তারা যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, মানুষ পুড়িয়েছে; ২০০১ নির্বাচনের পর যেভাবে আমার নেতাকর্মীদের অত্যাচার করেছে, আমরা যদি তার এক ভাগ প্রতিশোধ নিতাম, তোদের হদিস পাওয়া যেত না। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিরোধী দল সংসদে না থাকলেও তারা বক্তব্য দেয়- আমাদের নাকি পালানোর কোনো পথ থাকবে না। আমি এমন বক্তব্যদাতাদের উদ্দেশে বলতে চাই- শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না।
১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়ে মাত্র দেড় মাসও থাকতে পারেনি। ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেছিল। ২০০৬ সালের এক কোটি ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করে। এই ভোটও বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ভোট চুরির কারণে দুইবার যাদের নির্বাচন বাতিল হয়েছে, তাদের মুখে এত লম্বা কথা আসে কীভাবে আমার প্রশ্ন। একটা প্রবাদ আছে, চোরের মায়ের বড় গলা।’
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের নির্মম হত্যাকা-ের পর জিয়াউর রহমানের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ অগাস্টের সময় আমি এবং আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম। জিয়াউর রহমান আমাদের আসতে বাধা দিয়েছে। শেখ রেহানার পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসি।
‘১৯৮১ সালে দেশে আসার পর জিয়াউর রহমান আমাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমি যে আমার মা-বাবা, ভাই বোনের জন্য দোয়া করব, মোনাজাত করব, সে সুযোগটাও দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমাকে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া পড়তে হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো মানুষ তার আপনজন খুন হলে বিচার চায়, আর আমরা যারা ১৫ অগাস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।
‘জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসে, ওই ফারুককে ফ্রিডম পার্টির করার সুযোগ দেয়, রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে কর্নেল রশিদ, হুদাকে নিয়ে জনগণের ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে। যে নির্বাচনে ২/৩ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণের ভোট চুরি করে ওই রশিদকে পার্লামেন্টের বিরোধী দলের আসনে বসায়। হুদাকে পার্লামেন্টের মেম্বার করে। তারা খুনিদের উৎসাহিত করে একের পর এক অমানবিক কাজ করে গেছে। আর বাংলাদেশটাকে জঙ্গি দেশ বানিয়েছিল।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর ররহমান বাংলাদেশটাকে একটা কারাগারে পরিণত করেছিল, প্রতিরাতে কারফিউ, মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা ছিল না, কথা বলার অধিকার ছিল না, সাদা মাইক্রোবাসে কেউ প্রতিবাদ করলেই তুলে নিয়ে যাওয়া হতো, আর কোনোদিন তার লাশও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমাদের বহু নেতাকর্মী এভাবে হারিয়ে গেছে। শুধু আমাদের না, সেনাবাহিনীর অফিসার সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছে, বিমানবাহিনীর অফিসারদের হত্যা করেছে, তাদের আত্মীয়স্বজনের লাশও দেখতে পায়নি।
এদের যে চরিত্র, এই যে মিলেটারি ডিক্টেটরির মধ্যে থেকে তৈরি করা দল, এই দলটা দিয়েই দেশে জঙ্গি দেশে পরিণত করে। এই দলটাই একটা সন্ত্রাসী দল।’
দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বারবার বাধা এসেছে যেন কোনোমতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারে। ওই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের যারা মাস্টার, প্রভু তারা কিন্তু এই চক্রান্তে এখনও লিপ্ত। তবে আমি যেটা মনে করি, বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের জনগণ, এরাই আমার মূল শক্তি। এই জনগণের উপর ভরসা করে বাবা মা ভাইবোন হারিয়ে যেদিন এয়ারপোর্টে নামছিলাম, আমিতো কই আমার আপনজনের ছায়া পাইনি। যেদিন বিদেশে যাই সেদিন কামাল, জামাল সবাইতো ছিল, এয়ারপোর্টে আমাকে বিদায় দিতে আসছিল। এসে তো আমি তাদেরকে পাইনি। বনানীতে এসে দেখেছি সারি সারি কবর। আর তো কিছু আমি পাইনি। বাংলাদেশের বাংলার মানুষই আমাকে আপন করে নিয়েছে।’
দেশের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কৃষিখাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। ছিয়ানব্বই সালে আমরা যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আমার সঙ্গে লম্বা একটা তালিকা নিয়ে বসেন। তাদের অনেক প্রস্তাব- এই করতে হবে, ওই করতে হবে। আমি শুধু বলেছিলাম দেশটা আমাদের, কি করতে হবে আমি জানি। দেশের মানুষের জন্য কোথায় কি ভাবে কাজ করতে হবে সেটা আমার জানা আছে।
‘তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কান্ট্রি ডিরেক্টর বলে যে, কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া যাবে না। তাহলে আমরা উত্তর দেব না। তাকে বলেছিলাম অর্থ দেয়া লাগবে না, আমরা নিজের টাকা কৃষকদের দেব। কারণ, এই কৃষকরা সার চাইতে গেলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে খালেদা জিয়া। আমি নিজে ছুটে গিয়েছিলাম। আমি কৃষক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। বিদ্যুৎ চাচ্ছিল সেচের জন্য, সেটা খালেদা জিয়ার কাছে অপরাধ ছিল। গুলি করে তাদেরকে মারে। আমি ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে, প্রতিটি পরিবারকে আমরা সহযোগিতা করেছি। আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকি, মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের দায়িত্ব।’
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।