জলাবদ্ধতার সংকট নিয়ে সমন্বয় সভায় মেয়র
নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতাধীন ১৮টি খালের কাজ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। রিটার্নিং ওয়ালের কাজ শেষে খালের মাটিও উত্তোলন করা হবে। এতে আসন্ন বর্ষায় নিম্নাঞ্চলের অন্তত একটি অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। তবে চসিকের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার বিকল্প নেই। জলাবদ্ধতা নিয়ে যে সংকট-জনদুর্ভোগ বিদ্যমান তা এ শুকনো মৌসুমে শেষ করতে হবে। ’
গতকাল রোববার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টাইগারপাসের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এসব কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা যেমন, চকবাজার, মুরাদপুর, পশ্চিম ষোলশহর, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মোহরা, বহদ্দারহাটসহ আশপাশের এলাকার মানুষজন অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশি দুর্ভোগে থাকে। যে খালগুলোর রিটার্নিং ওয়ালের কাজ শুরু হবে, সেসব সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। ৩৬টি খালের সব জায়গা কাজ করতে গেলে ট্রুথফুল রেজাল্ট আসবে বলে মনে হয় না। আরেকটি বিষয় হলো, বে-টার্মিনালে কিছু স্লুইস গেট সিডিএ নির্মাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বে-টার্মিনালের জন্য সেখানে ওয়াল করে দেওয়া হয়েছে। স্লুইস গেটের পরে মনে হয় ২৫ থেকে ৩০ ফিট জায়গা আছে। এগুলো দিয়ে পানি সরার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক জায়গায় ভরাট হয়ে গিয়েছে। সেখানকার লোকজন বারবার আমাদের কাছে পানি না সরার অভিযোগ করেছে। এভাবে কাজ করে জনভোগান্তিও কেন হবে? অর্থেরও কেন অপচয় হবে? এ ব্যাপারে সমন্বয়ে কাজ করার অনুরোধ জানাচ্ছি সিডিএকে। সমন্বয় না করার কারণে অনেক অসঙ্গতি সৃষ্টি হয়। এতে জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘নগরীতে যে রাস্তাগুলো চসিক নির্মাণ করে তার ধারণ ক্ষমতা ৮ থেকে ১০ টনে গাড়ি চলাচলের জন্য। বন্দর থেকে ৩০ থেকে ৪০ টন মালামাল নিয়ে যে লরিগুলো চলে এতে আমাদের রাস্তাগুলো নষ্ট করে ফেলে। এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। কারণ হোল্ডিং টেক্স বিভিন্ন সংস্থার রাজস্ব নিয়ে চসিককে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। গার্ভেজ, নেটিংয়ের যে প্রস্তাব দেন তাতে অর্থ খরচ হবে। এসব আসবে কি করে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণের পর আবার কাটতে হয়। কিন্তু কোন রাস্তা কখন কাটা হবে এ বিষয়ে চসিকের সাথে সমন্বয় করা হলে সেই নির্ধারিত সময়ের পর রাস্তা নির্মাণ করা হবে। ২০১৮ সালের পারমিশন দেখিয়ে রাতারাতি রাস্তা কাটাকাটি বন্ধ করে চসিকের পারমিশন নিয়ে কাজ করতে হবে। সাথে পুলিশকেও সমন্বয় করতে হবে।’
মৃতপ্রায় ২১টি খালের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় যে ৩৬টি খালের কাজ করা হচ্ছে তার বাইরে যে ২১টি খাল রয়েছে তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে তাতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে জলাবদ্ধতা সম্পূর্ণ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতিমধ্যে ছোট খাল নালা-নর্দমার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছে।’
পাহাড় কেটে চট্টগ্রাম শহরকে ন্যাড়া করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নগরে পাহাড় সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে পরিবেশ অধিদপ্তর চুপ করে আছে। নোটিশ দিয়ে পাহাড় কর্তন বন্ধ করা যাবে না। সরাসরি অ্যাকশনে যেতে হবে। যারা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে। কে প্রভাবশালী কে হাই প্রোফাইলের লোক এগুলো বলে লাভ নেই। আইনের সামনে সবাই সমান। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হন। না হয় বিশ বছরে শহর পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা এবং খাল, নালা-নর্দমায় বর্জ্য ফেলার কারণে কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্দর বন্ধ হয়ে গেলে পুরো দেশ অচল হয়ে যাবে। দেশের উন্নয়ন স্থবির হয়ে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কর্ণফুলী রক্ষায় পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এ ছাড়া যে স্লুইচগেটগুলো চউক ইতিমধ্যে নির্মাণ শেষ করেছে তা পরিচালনার দায়িত্ব চসিককে নেওয়ার নিমিত্তে জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিডি স্থাপনে নগরের অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে সদয় দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানান তিনি।’
সিডিএ’র মেগা প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে নগরীর ১৮-২০টি খালের কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হবে। ৪২টি সিলট্রেপ স্থাপনের কাজ চলছে। সব ঝুঁকিপূর্ণ ড্রেনের উপর স্ল্যাব করা হবে। উন্মুক্ত খালগুলোতে ২ ফুট উচ্চতার রেলিং করা হবে। রাজাখালী, রুবি সিমেন্ট, রামপুর ও ত্রিপুরা খালের কাজ এ বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান।’
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, চউক সচিব মো. আনোয়ার পাশা, সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামছ, বন্দরের সিনিয়র হাইড্রোগ্রাফার মো. নাছির উদ্দিন, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রায়হান মাহবুব, পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক।