এবার দুর্ভোগ কম হবে : লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী
ভূঁইয়া নজরুল :<
প্রবেশ করেছে মৌসুমী বায়ু। আর এর প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। চট্টগ্রামে গত দুই দিনে প্রায় দেড়শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও বৃষ্টির তীব্রতা কম থাকায় কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। তবে বৃষ্টির তীব্রতা আগামীতে আরো বাড়বে। তখন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক নিয়মেই জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।
কিন’ এবার অন্যান্য বারের মতো জলাবদ্ধতা দেখা যাবে না বলে জানালেন জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী। তিনি বলেন,এবার অবশ্যই চট্টগ্রামবাসী অন্যান্য বছরের চেয়ে কম জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ ভোগ করবে।
সদরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত আটটি খালে এখনো কাজ চলছে, কাজ চলমান রয়েছে মহেশখালের স্লুইস গেটে, এছাড়া অনেক খালের মধ্যে এখনো মাটির স্তুপ জমে আছে। তারপরও নগরবাসী জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ কম পাবে কিভাবে? এসব এলাকায় তো পানি আটকে থাকবে। এই প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন,‘আমরা ইতিমধ্যে কিছু খালে পানি প্রবাহ যাতে সঠিকভাবে যেতে পারে সেজন্য পরিষ্কার করে দিয়েছি, বাকি খালগুলোর কাজ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করবো। নতুন কোনো কাজ না করে শুধুমাত্র খালগুলোতে পানি চলাচল সচল রাখার জন্য যা করার দরকার আমরা তা করবো।’
চট্টগ্রাম নগরীতে পানি নিষ্কাষনের অন্যতম তিন প্রধান খাল হলো চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল ও মহেশখাল। এই তিন খালেই রেগুলেটর নির্মাণের জন্য কাজ চলছে। এসব খালের পানি বাইপাস হয়ে চলাচল করছে। বর্ষায় কি অবস্থা হবে? এই তিন খালের পানি ঠিকমতো প্রবাহিত হতে না পারলে নগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এই প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, মহেশখালে বাইপাস দিয়ে পর্যাপ্ত পানি চলাচল করতে পারবে। চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আরেকটি প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তাদের দেয়া বাঁধের কারণে পানি নামতে না পারণে তারা বাঁধ কেটে দিবে বলেছে।’
নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড় এলাকায় বৃষ্টি হলেই পানি ওঠে। গত দুই দিনের বৃষ্টির তীব্রতা কম থাকায় হয়তো উঠেনি। সামনে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে লে.কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন,‘ ষোলশহর দুই নম্বর গেইট ও মুরাদপুরে এবার পানি জমবে না। এই স্থানে যে কারণে পানি জমে আমরা তা নিরসন করেছি। দুই নম্বর গেট মোড়ে কবরস্থানের প্রান্ত থেকে চশমা খালে পানি যাওয়ার জন্য রাস্তার নিচ দিয়ে একটি বড় ড্রেন ছিল। আমরা এই ড্রেনটি ক্লিয়ার করে দিয়েছি। একইসাথে মসজিদ গলি এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে এবং সিএন্ডবি কলোনীর মোড় থেকে রাস্তার উভয় পাশ দিয়ে দুটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সেই ড্রেনের কারণে পানি দ্রুত নেমে আসবে এবং পানি জমবে না।’
তিনি আরো বলেন, মির্জা খালের পানি যাতে নেমে যেতে পারে সেজন্য শমসের পাড়া এলাকায় বস্নকেজ ক্লিয়ার করে দেয়া হয়েছে।
তবে প্রবর্তক মোড় এলাকায় পানি উঠবে বলে তিনি উলেস্নখ করেন। তিনি বলেন, প্রবর্তক মোড়ে কালভার্ট উঁচু করা হলেও পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ভেতরে খালটি অনেক সরু হয়ে গেছে। এতে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে না। আমরা ক্লিয়ার করে দেয়ায় পানি ধীরে ধীরে নেমে যাবে, তবে জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হবে না।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট দুই নম্বর খালে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করতে দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসার্স কলোনীর ২৫ ফুট চওড়া একটি রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। খালের রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের সময় সঠিকভাবে শিপ পাইলিং না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে খালগুলোতে জমে থাকা মাটির পাশাপাশি নগরীর অনেক নালা ও ড্রেন থেকে এবার মাটি উঠানো হয়নি। এতে করে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে। এবিষয়ে কথা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, এবার গত কিছুদিন ধরে আমরা নালাগুলো পরিষ্কার করেছি। কিন্তু পরিষ্কার করার পরপরই মানুষজন আবর্জনা ফেলে আবারো ভরাট করে ফেলে। একইসাথে চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বৃষ্টির পানির সাথে নেমে আসা বালিতে নালাগুলো ভরাট হয়ে যায়। তাই এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আর আমাদের লোকজন তা করবে।
তিনি আরো বলেন, তবে এবার যেহেতু বড় নালা ও খালগুলো ক্লিয়ার রয়েছে এবং আমাদের লোকজন ছোটো নালাগুলো ক্লিয়ার রাখার কাজ করছে। এতে টানা বৃষ্টির সময় পানি উঠলেও দ্রুত তা নেমে যাবে।
এদিকে সদরঘাট-২ নম্বর খালসহ ১০টি খালে রিটেনিং দেয়াল ও সংস্কারের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স। এবিষয়ে বিশ্বাস বিল্ডার্সের সাইট ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউল হক বলেন,‘ আমরা ১০টি খালে রিটেনিং দেয়ালের কাজ করছি। আর তা করতে গিয়ে খাল পাড়ে বিশেষ করে সদরঘাট-২ খালে বন্দর অফিসার্স কলোনীর একটি রাস্তা দেবে গেছে। আমরা দ্বিতীয় শিপ পাইলিংয়ের মাধ্যমে তা ঠিক করে দেবো। একইসাথে কাজ শেষে রাস্তাটিও আমরা তৈরি করে দেবো।’
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প নিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কিন’ সিডিএ এই প্রকল্প নিজে না করে তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল বিএস শিট অনুযায়ী পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, খালের উভয় পাশে ১৫ ফুট চওড়া রোড ও খালের মুখে ৫টি সস্নুইশ গেইট বসানো, সিল্ট ট্র্যাপ ও জলাধার নির্মাণ, ৩৬টি খাল খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন, ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ, নতুন করে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ রয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে শেষ হচ্ছে। তবে শেষ হলেও এটি সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী এর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।