সামনের শীতে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান নেওয়ার সময় এ নির্দেশনা দেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। সবাই, আমি কাউকে বাদ দিতে পারবো না। সেজন্য হয়তো আমরা এটা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে সামনে শীত, পরিস্থিতি আরেকটু হয়তো খারাপের দিকে যেতে পারে। তবুও আমাদের এখন থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সবাই সুস্থ থাকেন এটাই আমরা চাই। দোয়া করেন দেশটা যাতে এই করোনা ভাইরাসের মহামারি থেকে মুক্তি পায়। সারাবিশ্বই যাতে মুক্তি পায়। মানুষের সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে এই করোনা ভাইরাসের কারণে।
এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪ হাজার ৯৭৯ জনে। এছাড়া নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৭০৫ জনের দেহে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হলো ৩ লাখ ৫০ হাজার ৬২১ জন করোনা রোগী।
শীতে করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সদ্য সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং অণুজীব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সানিয়া তাহমিনা গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার সংক্রমণ গত বছর শুরু হয়েছিল শীতকালেই, ডিসেম্বর মাসে। তখন দেখা গেছে, শীতপ্রধান দেশগুলোয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে সারা বিশ্বেই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, শীতকালে এ রোগটির প্রাদুর্ভাব আবার বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আসছে শীতে করোনাভাইরাস মহামারি আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে শীতের আগে থেকেই উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে।
যে তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাসটি বাড়ে, সহজে সংক্রমিত করতে পারে বা নিজের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে, শীতকাল সেটার জন্য আদর্শ। এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে শীতকালে এ ভাইরাসের বিস্তার বেশি হতে পারে। এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় হাঁচি, কাশি দেয়া হলে বাতাসে জীবাণুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো অনেকক্ষণ ধরে ভেসে থাকে। গরমের সময় সেটা যখন দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু শীতের সময় অনেকক্ষণ ধরে বাতাসে থাকে। ফলে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
বাংলাদেশে এই ভাইরাসের আচরণটি রহস্যময়। বর্তমানে কোনো কারণ ছাড়া সংক্রমণের হার নিম্নমুখী দেখা গেলেও মৃত্যুহার খুব বেশি কমেনি। অন্যদিকে আক্রান্ত লোকজন অনেকেই ঘরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অধিকাংশই তাতে সুস্থও হয়ে উঠছেন। ফলে হাসপাতাল ও আইসোলেশান সেন্টারগুলোতে চাপও কমে এসেছে। এরমধ্যে কিছু আইসোলেশান সেন্টার ও কভিড চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত চিকিৎসাকেন্দ্র সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
যদি আশঙ্কা সত্যি হয়, শীতে যদি করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয় তাহলে তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি এখন থেকে নিয়ে রাখতে হবে। শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছিল তার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নজর দিতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়