শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপায় বের করুন

গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের সংকট, অস্থিতিশীলতা, সরকার পতনের পর অর্থশালীদের অনেকেই পালিয়ে যাওয়া, ব্যাংক খাতের দৈন্যদশায় অর্থায়নে কড়াকড়িসহ নানা কারণে দেশে শিল্পখাতে বিনিয়োগ কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে শিল্পে বিনিয়োগ ২৬ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। এতে করে শিল্প উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য মতে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৯৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের। এসব যন্ত্রপাতি বিভিন্ন নতুন কলকারখানা স্থাপন এবং পুরানো কলকারখানার সম্প্রসারণে ব্যবহৃত হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৭১ কোটি ২৬ লাখ ডলারের। অর্থাৎ চলতি বছরে এলসি খোলার পরিমান ২৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ২৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে গেছে। এ ছাড়া আগের বছরের ৫ মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ১১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। চলতি বছরে যা ৮৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলারে নেমেছে। এক্ষেত্রে ২৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ এলসি নিষ্পত্তির হার কমে গেছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য শুভলক্ষণ নয়। এতে বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দেয়। নতুন কলকারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণ না হলে দেশে পণ্য উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরনের অন্তরায় তৈরি হয়। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শিল্প উদ্যোক্তরা মনে করেন, জ্বালানি যে কোন শিল্পের অন্যতম প্রধান উপকরণ। কিন্তু গত দুই বছর ধরে দেশে গ্যাস–বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। শিল্প কারখানার জন্য নতুন গ্যাস বা বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। মাসের পর মাস ঘুরেও গ্যাসের সংযোগ পাওয়া যায় না। জ্বালানি নিশ্চিত না হলে শিল্প কারখানা স্থাপন অসম্ভব। কিন্তু দেশে গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্বালানি ক্ষেত্রে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করেছে। ডলার সংকটে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রয়োজনীয় এলএনজি আমদানি না হওয়ায় গ্যাস এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করে। জ্বালানি সংকটে বহু কারখানাই নিজেদের সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারেনি। আংশিক উৎপাদন করেছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে কারখানা সম্প্রসারণের কথা চিন্তাও করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তারা।
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় আছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই স্থবিরতা কাটাতে হলে নতুন বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা ছাড়া উপায় নেই। বর্তমান সরকারের মেয়াদ পাঁচ মাস পেড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশি সুখবর নেই। অবশ্য সময়টি আবার খুব বেশিও নয়। তারপরও আমরা ইতিবাচক কিছু দেখতে চাই।