শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে

সাভারের আশুলিয়ায় গতকালও শ্রমিক অসন্তোষের মুখে প্রায় অর্ধশতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। বুধবার সকাল ১০ টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে অবস্থিত এসব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শিল্প পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, গতকাল সকালে যথা নিয়মে কারখানায় যায় শ্রমিকরা কিন্তু কাজ না করে বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ একের পর এক কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। পরে শ্রমিকরা বেরিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা কারখানাগুলোর সামনে গিয়ে বিক্ষোভ ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সেসব কারখানাতেও ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আশুলিয়ার ছোট-বড় অন্তত ৬০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ছয় ব্যবসায়ী নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যেসব কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, সে দাবিগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে কারখানার ফটকে বহিরাগত শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন। বহিরাগতরা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা মালিকেরা লে-অফ ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। তখন পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।

কয়েক দিন ধরে মজুরি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে চাকরিচ্যুত শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরাও নিয়োগে নারী-পুরুষের সমতা চেয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করা হয়। এতে সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখা দেয়।
এ প্রেক্ষিতে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প ঘিরে চলমান অসন্তোষ দমনে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই বিক্ষোভের সঙ্গে প্রকৃত শ্রমিকেরা নয়, বহিরাগতরা জড়িত বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টারা। বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দেশব্যাপী পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে শ্রমিকদের অসন্তোষের বিষয়টি নিয়ে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যান হাসান আরিফ, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ ছয়জন উপদেষ্টা। এ সময় চলমান পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।
মাসেরও অধিক সময়জুড়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে রফতানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর আর কোনো অজুহাতে দেশের উৎপাদন ব্যাহত করা যাবে না। যেকোনোভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেষ্ট হতে হবে।