করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় ১ বছর যাবত দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষা সংশ্লিষ্টমহল ও সরকারের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা মানসিক হতাশায় ভুগছেন শিক্ষা জীবনের অনিশ্চয়তার কারণে। শিক্ষাজীবন যত দীর্ঘ হবে, কর্মসংস্থান তথা চাকরির ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেশনজট হবে ভয়াবহ, সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এর অশুভ প্রতিক্রিয়া পড়বে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো ছুটি চলছে। এইচএসসিতে দেওয়া হয়েছে অটোপাস। অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুরু হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ নিতে পারেননি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর শেষ পর্বের পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলগুলো বন্ধ রেখেই পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ে। ছাত্রছাত্রীরা আবাসিক হল খোলার জন্য চাপ দিতে থাকে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করে, পরে প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি আগামী ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় হল খোলা এবং ২৪ মে থেকে নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই ঘোষণা শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ বাড়িয়ে দেয়, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবরও আসছে। এর মধ্যে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭টি কলেজের পরীক্ষা চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। শিক্ষা প্রশাসনের এসব বিভিন্নমুখি সিদ্ধান্তে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদরা। পরীক্ষা স্থগিতের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আগামী সোমবারের মধ্যে পরীক্ষা স্থগিতের ব্যাপারে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার পরিবারে দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী যুক্ত। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে এবং বিশেষ করে করোনা বিষয়ক কারিগরি পরামর্শক কমিটির সাথে আলোচনা করে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রণালয় ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে বলে তারা মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব ক্যালেন্ডার রয়েছে, তাই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও তাদের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করতে সুযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। পরীক্ষা শুরু করে আবার স্থগিত করায় শিক্ষার্থীর মনোজগতে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি করবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রতিবাদের পেছনে ইন্ধনদাতা খুঁজে ফল পাওয়া যাবে না বরং সুচিন্তিত ও বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়াই যুক্তিসংগত।
আমাদের মনে রাখতে হবে করোনা এখনো আমাদের দেশে বা বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সকলকে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন, জাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতি এসবও বিবেচনায় রাখতে হবে। সকল পক্ষকে ধৈর্য, সুস্থির হয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়