সাগর আহমেদ »
গ্রীষ্মের ছুটিতে তিন বন্ধু অপু, তিয়ান ও টিয়ানার স্কুল বন্ধ। ঘরে শুয়ে বসে কাটছে তাদের সময় । এমন সময় অপুর বাসায় বেড়াতে এলেন টোকন মামা। তিনি একজন ক্লাইমেটোলজিষ্ট। পেশাগত প্রয়োজনে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি সংস্থার তিনি বড় মাপের অফিসার। টোকন মামাকে দেখে অপু তো অনেক খুশি । মামার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য সে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিয়ান ও টিয়ানাকে বাসায় ডাকলো। ওরা এসে হাজির হলে, টোকন মামা বললেন তিনি কিছুদিনের মধ্যেই ভারতের কুমায়ূনের গভীর বন এলাকায় শিকার করতে যাবেন। এর জন্য তিনি ভারত সরকারের অনুমতি নিয়েছেন। শুনে, তিন বন্ধু ও মামাকে ধরে বসলো , তারাও তার সাথে যাবে। তো কি আর করা , ভাগ্নে বলে কথা! টোকন মামা ছুটোছুটি করে সবার কাগজ পত্র রেডি করলেন । তারপর তারা বাসে করে প্রথমে কোলকাতা, তারপর সেখান থেকে ট্রেনে করে উত্তর প্রদেশের কুমায়ুন ফরেষ্টে হাজির হলো । ফরেস্ট রেঞ্জার অফিসে কাগজ পত্র দেখিয়ে তারা বনের ভিতরে এগিয়ে চললো। মাঝে মাঝে মরা ডাল পায়ের নিচে পড়ে মট করে শব্দ হচ্ছে আর সাথে সাথে টিয়ানা ভয় পেয়ে চমকে উঠছে। এটা দেখে সবাই খুব একচোট হেসে নিলো। মামার হাতে শিকারী রাইফেল,পিঠে বাঁধা ট্রাংকুলাইজার গান। অপু, তিয়ান ও টিয়ানার হাতে এয়ারগান । অপু তার প্রিয় গুলতি ও মার্বেল নিয়ে এসেছে । তিয়ান ও তার বড় চাকুটা নিয়ে এসেছে। মামা শিকারে সহযোগিতা করার জন্য কয়েকজন লোক ভাড়া করেছেন । তারাও সাথে সাথে আসছে ।হঠাৎ দেখা গেলো সম্ভবত বাঘে একটা হরিণকে মেরে আধখাওয়া অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে । আকাশে চক্কর দিচ্ছে শকুনের দল। হরিণটার প্রতি ওদের লোলুপ দৃষ্টি। অপু নিমেষেই গুলতিতে মার্বেল লাগিয়ে একটি শকুনকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলো। সাথে সাথে শকুনটা দাপটাতে দাপটাতে মাটিতে এসে পড়লো । অপু আহত শকুনটাকে ঝোলায় ভরে দলের সাথে এগিয়ে চললো। পথে মামা হাতির পায়ের ছাপ দেখে ঠোঁটে আঙ্গুল লাগিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বললেন। তারপর ঘাপটি মেরে অগ্রসরমান হাতির দলটিকে বাইনোকুলার দিয়ে দেখতে লাগলেন। সবাই প্রায় একঘন্টা ধরে অসীম ধৈর্য নিয়ে যার যার পজিশনে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রথম হাতিটি কাছে আসতেই টোকন মামা ট্রাংকুলাইজার গান দিয়ে গুলি করলেন। হাতিটা টলে উঠে পড়ে গেলো। বাকি হাতিগুলো বন জঙ্গল ভেঙে হুরমুড়িয়ে পালিয়ে গেলো। অপু দেখলো পড়ে থাকা হাতিটা ঘুমিয়ে পড়েছে। সে অবাক হয়ে মামার দিকে তাকালো। টোকন মামা বললেন,” এ বন্দুক দিয়ে গুলি করলে হাতিরা মরে না, এক্ষেত্রে গুলির বদলে ঘুমের ঔষধের আ্যমপুল থাকে। সেগুলোই হাতিদের গায়ে বিদ্ধিহয়, তারা ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবেই হাতি ধরা হয়। হাতিটাকে একটা চাকাওয়ালা গাড়িতে উঠিয়ে সহকারীরা টেনে নিয়ে চললো। তখন সন্ধ্যা । টোকন মামা সহকারীদের একটা বড়সড় এবং উঁচু গাছে মাচা বানাতে বললেন। মাচা বানানো হয়ে গেলে মামা সবাইকে নিয়ে মাচায় বসে পড়লেন । রাত গভীর হতে থাকে। হঠাৎ বনের একদিক থেকে বানরের চেঁচামেচির আওয়াজ পাওয়া গেলো। সবাই বুঝে গেলো বাঘ এসেছে । কুমায়ূন জঙ্গলের বাঘ গুলো বড় , হিংস্র ও ভয়ংকর হয়। সবাই শ্বাসরুদ্ধকর ভাবে অপেক্ষা করতে লাগলো। দীর্ঘ অপেক্ষা। হঠাৎ মাচার পেছনে মৃদু খসখস শব্দ হতেই টোকন মামা ও অপু দ্রুত গতিতে সেদিকে ঘুরে গিয়ে গুলি করলো । মামার রাইফেলের গুলিটা মিস হলো। কিন্তু অপুর এয়ারগানের গুলি বাঘের কপালে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা চামড়া ছিঁড়ে বেরিয়ে গেলো । বাঘটা কিছুটা বেশামাল হয়ে পড়লো। এই সুযোগে মামা রাইফেল তুলে আবার গুলি করলেন । এবার টোকন মামার মিস হলো না । গুলিটা বাঘের হৃদপিন্ড বরাবর লাগলো। কিছুটা দাপাদাপি করে বাঘটা অবশেষে মারা গেলো । সবাই একপ্রকার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। পরের দিন সকালে আলো ফুটতেই অপু বনে ঘুরে ঘুরে তিনটা বনমোরগ শিকার করে আনলো তার এয়ারগান দিয়ে। দুপুরে সবাই খুব মজা করে খেলো সুস্বাদু মোরগ পোলাও, সাথে প্রত্যেকে এক ক্যান করে সোডা ওয়াটার। বিকেলে শিকার গুলো সহকারীদের জিম্মায় রেখে সবাই বড় একটা নৌকা ভাড়া করে জঙ্গলের পাশের নদীতে ঘুরে বেড়ালো। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো পাড়ে নামতে গিয়ে। একটা কুমির পাড়ের কাছে পানিতে নাক ডুবিয়ে ওৎপেতে ছিলো। টিয়ানা নৌকা থেকে নামতে যেতেই কুমিরটি তার পা কামড়ে ধরলো। এ সময় তিয়ান এক দুঃসাহসিক কাজ করে বসলো। সে তার হাতের ছুরিটি দিয়ে কুমিরের জিহবায় আঘাত করলো। কুমির টিয়ানার পা ছেড়ে দিতেই অপু টিয়ানাকে টেনে পাড়ে নিয়ে এলো । কুমিরটি আহত অবস্থায় নদীতে ডুব দিলো। এসব দেখে সাহসী টোকন মামা খুব ঘাবড়ে গেলেন। বললেন, বাব্বা! আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে। এবারের মতো শিকার অভিযান শেষ। কাল দেশে ফেরার আয়োজন করতে হবে। তাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে, অপু টিয়ানার পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে ফিক করে হেসে উঠলো।