পতেঙ্গার আউটার রিং রোড লাগোয়া দক্ষিণ হালিশহরের নারকেলতলার একজন কৃষক শমসুল আলম। এবারের রবি মৌসুমে ছয় কানি জমিতে তিনি শীতকালীন সবজি, বরই, পেয়ারা, ও লালশাক চাষ করছেন। সেচে ব্যবহার করছেন জমির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নালার ময়লা পানি। কেননা, আশপাশে কোনো গভীর নলকূপ কিংবা পুকুর নেই। একটা গভীর নলকূপ বসাবেন, এমন সামর্থ্যও নেই শমসুল আলমের। সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, গভীর নলকূপ স্থাপন করতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে; কিন্তু এত টাকা তাঁর নেই। বাধ্য হয়ে তিনি নালার ময়লা পানি ব্যবহার করছেন। এ পানি ব্যবহার করলে ক্ষতি কী, তা তিনি জানেন না।
শহরের ভিতরেই এমন অস্বাস্থ্যকর ও বিষাক্ত শাকসবজি উৎপাদিত হচ্ছে আর তার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর অথচ তারা তা দেখেননি, জানেনও না।
জানা গেল শুধু এই কৃষক নন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের বিস্তীর্ণ প্রান্তরের তিন শতাধিক কৃষক চাষবাসে নালা-নর্দমার পানি ব্যবহার করছেন। সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের চৌচালা, আনন্দবাজার, নারকেলতলা, আকমল আলী সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় এই কৃষকদের বসবাস। স্থানীয় ২০ কৃষক জানিয়েছেন, পানির বিকল্প উৎস না থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়ে নালা-নর্দমার পানি ব্যবহার করছেন। সেচের পানির সংকটে তাঁরা দিশাহারা। বর্ষা ছাড়া বাকি সময় এই নালার পানিই ভরসা তাঁদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, পতেঙ্গায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এর মধ্যে চাষাবাদে নালার পানি ব্যবহার হয় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে, বাকি জমিতে গভীর নলকূপ ও পুকুরের পানি ব্যবহার করা হয়। পতেঙ্গায় মোট কৃষক আছেন ১ হাজার ২০০ জন। গত চার বছরে পতেঙ্গায় ৮৭ হাজার ৩১১ টন শীতকালীন সবজি ও ফসল উৎপাদিত হয়েছে। এবারের রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।
বছরের ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত রবি মৌসুম। এ মৌসুমে সাধারণত বোরো ধান, শীতকালীন সবজি, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন তেল ও ডালজাতীয় ফসলের উৎপাদন হয়। পতেঙ্গার আনন্দবাজার, চৌচালা, বেড়িবাঁধ, বাকের আলী ফকিরের টেক, আকমল আলী সড়ক,নারকেলতলা, আবদুল গফুর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমের এই মাঝামাঝি সময়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শিমসহ নানা শীতকালীন সবজি বিক্রির ধুম চলছে। এসব শাকসবজি চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম রেয়াজউদ্দিন বাজার থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট, চকবাজার, আগ্রাবাদ, ২ নম্বর গেটের বাজারে পৌঁছে যায়। কয়েক শ পাইকারি ও খুচরা সবজি বিক্রেতা এসব কিনে নিয়ে বিক্রি করেন।
নালার পানি কতটা দূষিত সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে পানিতে ধোয়া সবজি যার মধ্যে অনেককিছু আমরা কাঁচা অবস্থায় খেয়ে থাকি তাতে শরীরে কী ঘটছে তা সহজে অনুমেয়। কিন্তু এসব দেখার তো কেউ নেই! আমরা যাব কোথায়?
এ মুহূর্তের সংবাদ