রূপের রাজকুমারী
শেখ একেএম জাকারিয়া
শরৎকাল বাংলা বর্ষপঞ্জির ভাদ্র ও আশ্বিন মাসব্যাপী কালপর্ব যা বর্ষার পরবতী এবং হেমন্তের পূর্ববতী তৃতীয় ঋতু। এ ঋতুকে বাংলার কবি সাহিত্যিক ও সুধীজন ঋতুর রানি বলে অভিহিত করেন। বর্ষার ক্রমাগত বর্ষণ শেষে আগমন ঘটে শরতের। শরতের রূপবৈচিত্র্য উপমাহীন। শ্রাবণ শেষে বিরামহীন বাদলের সমাপ্তি ঘটলেই প্রকৃতি নতুন রূপে সজ্জিত হয়। এসময় আকাশবুকে ভেসে চলে শুভ্র মেঘ। সূর্যের কিরণ হয় দীপ্তোজ্জ্বল আর বাতাস হয় অমলিন।
আকাশের দীপ্তিমান নীল রঙের আভা অর্থাৎ ঘন মেঘের নীলিমা স্পর্শ করে মালার মত ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায় নানা প্রজাতির পাখি। শরৎ নিয়ে আসে অন্যরকম এক মধুরতা। সূর্যের নরম আলোয় সবুজ প্রকৃতি হয় নয়নমনোমুগ্ধকর। গাছপালা হয়ে ওঠে সতেজ ও সুন্দর। মনে হয় চারদিকে সবুজের সমারোহ। ধানক্ষেত হয়ে ওঠে চোখধাঁধানো সবুজ প্রান্তর । নদীর তীরে কাশবনে উঁকি দেয় সাদা সাদা কাশফুল। ভোরবেলা শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূর্বাঘাসের ওপরে চাদরের মত বিছানো থাকে সুমধুর ঘ্রাণ মেশানো রাশি রাশি শিউলিফুল। শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়ার মধুর গুঞ্জনধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। এছাড়া শরতের মূল আকর্ষণ দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা। যা বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। সমগ্র বাংলা জুড়ে পালিত হয় এ উৎসব। শরৎকালে এ পুজো হয় বলে দুর্গাপূজাকে শারদীয় উৎসব বলা হয় ।
এ ঋতুতে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। দেবী দুর্গার আগমনের জন্য তারা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে। সেই অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে দেবী দুর্গা শরতের আশ্বিনে নিয়ে আসেন অনাবিল আনন্দ। বাংলার আকাশে বাতাসে মুখরিত হয় দেবী দুর্গার আগমনধ্বনি। উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে বাংলার মানুষজন। পুজোর সময়ে স্কুলে ছুটি থাকায় ছোটদের মধ্যে আনন্দের সীমা থাকে না। বাংলার প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা ছাড়াও এসময়ে লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা উদযাপিত হয়।
গগনে শুভ্র মেঘের ভেলা আর নদীতটে সাদা কাশফুল, মালার মতো আকাশগঙ্গায় উড়ে চলা পাখির ঝাঁক, সকালবেলা হালকা শিশিরভেজা সবুজ ঘাস আর শিউলিতলায় সুঘ্রাণ মাখানো শিউলিফুল, নরম রোদের ঝলমলে আলো আর দুর্গা দেবীর আগমন সব মিলিয়ে শরৎ যেন নির্মলতার ঋতু। শরতের রাতে দেখা মেলে জ্যোৎস্নার মোহণীয় রূপ। এসময় বুড়োবুড়িরা ছোটদের কিচ্ছা শোনায় জ্যোৎস্না রাতে
আকাশ থেকে কল্পলোকের পরিরা ডানা মেলে নেমে আসে আমাদের পৃথিবীতে। মোটকথা, শরতের দিন-রাতের মনকাড়া সৌন্দর্য বাংলার মানুষজনকে মোহিত করে। আর এ কারণে বলাই যায় শরৎ বাংলার ঋতু -রূপের রাজকুমারী।