নুরনাহার নিপা »
হঠাৎ মোবাইলে রিংটোন! জুঁই চমকে গেল। ওয়ারড্রবের ওপর তুলে রাখা মেবাইলটার দিকে এগিয়ে এলো জুঁই। আনমনে ভাবছে কার ফোন?
এই সময়ে কে আবার ফোন দিল?
জুঁই ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে শুনতে পেল -কি করছো? জুঁই অনেকটা চমকে যায়।
জুঁই এতক্ষণে সব বুঝে এবার বলল-
তুমি কিন্তু আমাকে একেবারে সরাসরি আক্রমণ করছো! আমার ধারণা খুব একটা ভুল হয় না।
তিক্ত : জুঁই আমার কথাটা শোনো। আমি তোমাকে সব বলছি।
জুঁই : না। আমি তোমার আর কোনো কথাই শুনবো না।
তিক্ত : জুঁই আগে আমার কথাটা শোনো। দেখবে সব বুঝতে পারবে। প্লিজ, আমাকে একবার তো কথা বলার সুযোগ দেবে ।
জুঁই : আচ্ছা, ওই মেয়েটির সাথে তোমার কবে থেকে পরিচয় আর এমন সম্পর্ক?
তিক্ত : কোন মেয়েটা?
জুঁই : ও তাহলে চেনই না?
তিক্ত : আচ্ছা জুঁই, তোমাকে সব বলছি।
জুঁই : তুমি তার কয়েকটা পোস্টে লাইক দিয়েছ, আমি তা দেখেছি।
তিক্ত : জুঁই তাকে আমি ভালো করে চিনিও না। তার সাথে ফেবুতে পরিচয়। জাস্ট ফেবুফ্রেন্ড। এর বেশি কিছু তো না।
জুঁই : তুমি কী বলতে চাইছ? আমি বুঝি না মনে করছো?
তিক্ত : জুঁই এবার অন্তত শান্ত হও।
তিক্ত মেধাবী ছেলে। অল্পতে সব বুঝতে পারে। তার নিজের যোগ্যতায় ভালো একটা জবও করছে। জুঁই-এর সাথে সে কখনো মিথ্যে বলে না। কোনো বিষয় জুঁই জটিল করে ফেললে তিক্ত তা সহজে সমাধান করে। দুজনের ভুলগুলো সুন্দর করে মিটিয়ে নেয়। তার জন্য তো জুঁই তিক্তর প্রশংসা করেÑ যেমন বুদ্ধিমান, তেমনি গুণী। যার তুলনা হয় না।
তিক্ত : সেই মেয়েটি আমাকে মেসেজ করেছিল।
জুঁই : বাহ্, দারুণ তো! তুমি রিপ্লাই দাওনি? কিছু বলোনি সুন্দরীকে!
তিক্ত : একদম না। বিশ্বাস করো জুঁই আমি কোনো রিপ্লাই দিইনি। কোনো কথাও বলিনি। সেসব আমার কাছে অবাঞ্ছিত মনে হয়।
প্লিজ জুঁই, তুমি অভিমান করে দূরে থেকো না। তাতে আমার খুব কষ্ট হয়, তুমি বুঝো না? জুঁই একটা গান শোনাবে, প্লিজ।
গানটা পছন্দ করো, নাকি অভিনয়? কোনটা?
আমি দুটোতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। দুটোই আমার নেশা। তবে পেশা নয়। তুমি গানের অ্যালবাম বের করবে। সব রকমের সহযোগিতা আমি করবো।
জুঁই : না এখন চিন্তাভাবনা নাই, পরে দেখা যাবে।
তিক্ত : শুধু তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।
জুঁই : মানেটা কি তুমি কি আবার ভাব বাড়াতে চাও? সেটা হবে না আর।
তিক্ত : কেন নয়! আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। যেদিকে তাকাই মনে হয় এই তো তুমি? জুঁই আর জুঁই। আমি বাঁচতে চাই, প্রকৃতির বুকে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে চাই। তুমি আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। তোমাকে না পেলে এই পৃথিবীতে আমার থাকা হবে না।
জুঁই : তিক্ত তুমি কবি বলে কবিতার মতো সুন্দর করে বলতে
পারো। প্লিজ তিক্ত চুপ করবে এবার? এতো আবেগ মোটেই ভালো না। আবেগ দিয়ে সব হয় না। আবেগ মরীচিকা, আলেয়া।
তিক্ত : ভালোবাসি বলে তো আবেগ আসে মনের অজান্তে। যে কেউ প্রেমিক হয়ে বলতে পারে, তাদের কবি হতে হয় না। প্রেম করতে আবেগপ্রবণ, সুন্দর একটা মন লাগে, বুঝলে জুঁই। তুমি তো জানো, আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। আমি চিৎকার করে আকাশের ঠিকানায় নীলখামে পৌঁছে দিতে পারি আমার ভালোবাসার কাব্যগাথা।
জুঁই : জোর করে যেমন কাউকে নিয়ে ভাবা যায় না, আবার তেমনি জোর করে কাউকে ভাবনা থেকে মুছেও ফেলা যায় না। এও জানি, কেউ জীবন থেকে চলে গেলে জীবন থেমে থাকে না।কিন্তু তার রেখে যাওয়া স্মৃতি আর স্বপ্নগুলো জীবনকে বিষণ্ন করে তোলে। কবি গুরু বলেছেন, ভালোবাসা আর মৃত্যু দুটোই নিমন্ত্রিত অতিথি, একজন এসে নিয়ে যায় মন, আর একজন এসে নিয়ে যায় জীবন। কিছু-কিছু ভুল মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। কিছু কষ্ট মানুষকে পাথর করে দেয়। কিছু অভিমান মানুষকে অনেক পর করে দেয়। আর কিছু বাস্তবতা মানুষকে বদলে দেয়। ভালোবাসা চিরদিনই বেঁচে থাকে কখনো কবিতা হয়ে, কখনো গল্প হয়ে, কখনো স্মৃতি হয়ে, কখনোবা বোবাকান্না হয়ে।
আমি নিরুপায়। আমি বিবাহিতা। সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো? বন্ধুত্বের মধ্যে কখন যে দুজনে এতো কাছাকাছি এলাম। তোমার ভালোবাসাকে সম্মান করি, বিশ্বাস করি। তাই আমিও তোমাকে কখন এতটা ভালোবেসে ফেলেছি, আমার জানা নেই। তবুও তোমার সাথে বন্ধুত্বটা সারাজীবন রাখতে চাই। বন্ধুত্বের চেয়ে ভালো সম্পর্ক আর হয় না। তোমার-আমার পথ এক নয়। তুমি আমাকে ভুলে যাও।
তিক্ত : এক কথায় সব সম্পর্ক শেষ করে দিলে? আমাকে এভাবে হারিয়ে দিলে তুমি?
জুঁই : অন্য মানুষেরা দিব্যি প্রেম করে, হ্যাঁ করে, তাদের চিন্তাভাবনা আমার সাথে মেলে না। আমি তোমার ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করি। অপমান নয়, ভালোবাসা যেকোনো বয়সে, যেকোনো সময়ে আসে। মনের অজান্তে তবুও নিয়তির কাছে হার মানতে হয়।
তিক্ত : জুঁই তোমার অতীত নিয়ে কখনো কিছু জানতে চাইনি। আর কখনো চাইবোও না। তোমার সাথে কথা না বললে শহরটা আমার কাছে অন্ধকার হয়ে পড়ে।তোমাকে ছাড়া শহরের রাস্তাঘাটগুলো খালি-খালি লাগে। এ শহরের চোখ থেকে সব রঙ মুছে যায়। আমি চাই, এ রকম কিছু ব্যাকুলতা তোমার অনুভবেও ঝড় তুলুক। জুঁইকে কাছে টেনে নেয় ওই দুটি চোখ, যেন মায়ার শহর। ওই চোখে কত চাওয়া-পাওয়াা। ওই চোখে কালিদাস লেখে কতো শ্লোক।
জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে। ঠোঁটে-ঠোঁট নিদারুণ সুখ জাগে হৃদয়পুরে। আমার হৃদয়ে তুমি, তোমার হৃদয়ে আমি। সব দ্বিধা ধুয়ে ফেলে স্বপ্ন দিয়েছি মেলে হলে হোক, হয়ে যাক ঘোরতর বদনাম।
তিক্ত : বেদনা লুকাতে চাও তোমার বুক চিরে জলরাশি ছুটে চলবে প্রবলবেগে। কান্না ভুলে হাসবে তুমি।
জুঁই : নেশা চোখ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হীন ভুলে কাছে আসার প্রবণতা। কি যেন বলতে চেয়ে থেমে গেছে। ইচ্ছারা একেকটা মনের অজান্তে মাতাল গদ্য। আজকের বিকালটা কি কোনোদিন ভোলা যাবে। হৃদয় নিংড়ানো হতাশার দীর্ঘশ্বাস বুকের মাঝে।
ওদিকে তিক্ত বড্ড আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। জুঁই কি করবে। চিন্তাপোকা মাথার ভিতর চক্কর কাটে।
জুঁই : প্লিজ, তুমি আমাকে ফোন করো না, ভুলে যেও জুঁই নামে কোনোদিন কোনো মেয়ে তোমার জীবনে এসেছিল।
তিক্ত : জুঁই, তুমি এভাবে বলতে পারলে? একটুও তোমার কষ্ট হলো না আমার জন্য?
রাত গভীর কোনোভাবে দুচোখের পাতা এক করতে পারে না জুঁই। কষ্টের সময় চোখের ঘুমও স্বার্থপর হয়ে যায়, ছেড়ে চলে যায় সবার মতো।
কিছুদিন হলো তিক্ত ফোন করতে থাকে। রিসিভ করে না। মেসেজের রিপ্লাই দেয় না। তিক্ত ম্যাসেজ করে, প্লিজ, এভাবে চলতে থাকলে আমি মরে যাবো। তুমি যা বলো আমি তা করবো। জুঁই আবার রাগ করে। যেটা সম্ভব নয়, সেটা কেন বলছো?
সামনে আমার পরীক্ষা। এভাবে তুমি আমাকে পাগল করো না। তোমার আবেগ দেখে, তুমি কষ্ট পাচ্ছ, তাই তোমার সাথে কথা বলছি।
তিক্ত : অনেক কৃতজ্ঞতা তোমার প্রতি। অনেক দয়া করেছো। জুঁই চুপ করে আছে।
তিক্ত : এই জুঁই কিছু বলছো না যে। আমি তো পাগল। তুমি জানো আমার এই পাগলামিটা শুধু তোমার জন্য। জানি না আমি এখন কি করবো। আমার স্বপ্ন তুমি। আমার বেঁচে থাকা তুমি। ছায়ার মতো সবখানে তোমাকে দেখতে পাই। আবেগগুলো এক টুকরো সূর্য হয়ে জ্বলে। ভালোবাসা বিধাতার দান, যা মানুষরে জীবনকে সুখী ও সুন্দর করে। ভালোবাসা যা দেয় তার চেয়ে বেশি নেয়।
জুঁই : বিষণ্নতা মরে ও কি অদ্ভুতভাবে বেঁচে থাকা। তিক্ত অনেকদিন পর প্রোফাইলে জুঁই-এর পিকগুলো দেখে চোখ জুড়ালো। কি সুন্দর পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, সাবলীল। পিকগুলো যেন তিক্তের দিকে চেয়ে আছে। কিছু বলতে চায়? জুঁই তোমার কাছে কিছু চাই না। তুমি শুধু কথা বলবে। আমার মনের সব গ্লানি দূর হয়ে যাবে। কতদিন তোমাকে দেখি না। প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু শব্দহীন কষ্ট থাকে। যার সাক্ষী কেবল সে নিজেই। মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো। আমি তারা হয়ে বলবো, আমি তোমায় ভালোবাসি। ভালোবাসি।