জামাল খান এলাকাটিকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা দিয়ে একটি বড় সাইনবোর্ড টানানো আছে আশকার দীঘি সড়ক সংযোগস্থলে অর্থাৎ মোড়ে। এ ছাড়া সড়কদ্বীপে ছোট ছোট সাইনবোর্ডে এই এলাকায় হর্ন না বাজানোর কথা লেখা আছে। কিন্তু সারাদিন এই এলাকা থাকে সবচেয়ে শব্দমুখর হয়ে। বিশেষ করে স্কুল ছুটির সময়ে সেই সাইনবোর্ডের আশেপাশে হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতা চলে। দেখার কেউ নেই।
উচ্চ আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও হাইড্রোলিক হর্নের যথেচ্ছ ব্যবহার, যত্রতত্র মাইক বাজানো এবং নির্মাণকাজের শব্দে অতিষ্ঠ নগরবাসী। শব্দদূষণের প্রভাবে বৃদ্ধ ও শিশুদের হৃদরোগ ও শ্রুতিহীনতার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। নগরের ২০টি স্থানে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরীক্ষায় দেখা গেছে, শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রার অনেক ওপরে।
যানবাহনের হর্ন, সভা-সমাবেশ, ক্যানভাসারের মাইক, কনসার্ট, যত্রতত্র কারণে-অকারণে মাইকিং, কাচ কাটার শব্দ, নির্মাণকাজজনিত শব্দে এই দূষণ বাড়ছে। এ-সংক্রান্ত আইন থাকলেও তা কেউ মানছে না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না ।
পরিবেশ অধিদপ্তর নগরের বিভিন্ন স্থানকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা নামে ভাগ করে শব্দদূষণ পরীক্ষা করে। এর মধ্যে নীরব এলাকা হিসেবে ধরা হয় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ও আবাসিক এলাকাকে। এসব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০ ডেসিবেল।
কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেটে শব্দদূষণের মাত্রা পাওয়া গেছে ৭৭ ডেসিবেল। একইভাবে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সামনে পাওয়া গেছে ৭৭ দশমিক ১ ডেসিবেল। পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের সামনে ৭৭ ডেসিবেল, গোলপাহাড় রয়েল হাসপাতালের সামনে ৭৮ ডেসিবেল ।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো নিষেধ হলেও এখনো ট্রাক, বাসে এসব হর্নের ব্যবহার রয়ে গেছে। এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরীক্ষায় দেখা গেছে, খুলশী আবাসিক এলাকার সিএনজি স্টেশনের সামনে ৮১ দশমিক ৫ ডেসিবেল, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় ৮০ দশমিক ৩ ডেসিবেল, সিডিএ অ্যাভেনিউতে ৮১ দশমিক ২ ডেসিবেল, বাদামতলী মোড়ে ৮০ দশমিক ৫ ডেসিবেল, নগরের বহদ্দারহাটে ৮১ ডেসিবেল পাওয়া যায়। এর ফলে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক প্রসঙ্গে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, উচ্চমাত্রার শব্দে দীর্ঘক্ষণ থাকলে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। এ ছাড়া অধিক শব্দ হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আইন শুধু বানালেই হবে না তার সুষ্ঠু প্রয়োগও হতে হবে। তা না হলে আইন করে কোনো লাভ নেই। উচ্চ আদালত হাইড্রলিক হর্ন নিষিদ্ধ করেছেন কত আগে অথচ তা বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সক্রিয় নয়। ফলে জনগণকে সহ্য করতে হচ্ছে এই বিড়ম্বনা। কিন্তু সেটা আর কতকাল করবে?
এ মুহূর্তের সংবাদ