রাজিব শর্মা »
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডে পড়ে রয়েছে নয়শোর বেশি আমদানির গাড়ি। এসব গাড়ি মামলা, ডকুমেন্টস, আমদানি জটিলতাসহ নানা কারণে ছাড় করছেন না আমদানিকারকরা। আর যেসব গাড়ি জটিলতা কাটার পরও ছাড়াচ্ছে না, বড় অংকের রাজস্ব আদায়ের আশায় এসব গাড়ির মধ্যে অন্তত ১০০ টি গাড়ির নিলামের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আগামী ২১ জানুয়ারি দরপত্র প্রকাশের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
জানা যায়, শেডে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা যেসব গাড়ি নিলামে আনা হবে, তার মধ্যে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যদের ৩১টি ল্যান্ড ক্রুজারও রয়েছে। এসব গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত, কম শুল্কে নানা সুবিধাসহ সংসদ কোটায় আমদানি করেছিলেন নেতারা। তাছাড়া ইত্যিমধ্যে এসব গাড়ির ইনভেন্ট্রিও শেষ হয়েছে। তাছাড়া শেডে ব্যবসায়ী, প্রশাসনিক কর্মকতাসহ নানা ব্যক্তির গাড়িও রয়েছে। সবকিছু মিলে জটিলতা কাটিয়ে এবার শতাধিক গাড়ি নিলামে তোলে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কাস্টমস।
সংস্থাটির সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সংসদ সদস্যদের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩১ ল্যান্ডক্রুজার গাড়িগুলো গড়ে ৬০ শতাংশ হিসেব করে ৯ কোটি ৫০ লাখ রিজার্ভ ভ্যালু নির্ধারণ করা হয়। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হবে ২৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স। হিসেব করলে ৩১টি গাড়িতেই রাজস্ব আদায় হবে প্রায় ২২১ কোটি টাকা। এছাড়া নিলামে তোলা হয়েছে ৫টি হ্যারিয়ার, ১৩টি হাবাল, ৩টি করে স্কয়ার, প্রিমিও এবং নোয়া। এ ছাড়া ১টি করে রয়েছে র্যাভ-ফোর এবং ওসাকা ব্র্যান্ডের গাড়ি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বলেন, এবার নিলামে গাড়িগুলোতে শত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করা যাবে। তবে এটি নির্ভর করছে বিডাররা কতটা দরে দিচ্ছে। তারা যত বেশি দর হাকাঁবে, রাজস্ব তত বাড়বে।
এদিকে নিলামে ঘোষণা শোনার পরপরই ৩১টি গাড়ি আমদানিকারকরা অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। তবে সংসদ সদস্যদের গাড়িগুলো কেউ ছাড় করেননি।
ছাড় করিয়েছেন এমন এক আমদানিকারক ব্যবসায়ী বলেন, বিশেষ করে বন্দরে গাড়ি আসলেও, কাগজ সঙ্গে সঙ্গে আসে না। যার কারণে তৎক্ষণাৎ নিয়ে যাওয়া যায় না। ডকুমেন্ট আসার পর জরিমানাসহ দিয়ে আমাদের ছাড় করতে হয়। আর অনেক গাড়ি ছাড়ানোর পরই আবার জটিলতায় পড়তে হয়। যার কারণে গাড়ি আমদানি করতে গিয়ে নানা কারণে আর গাড়ি ছাড়ানো যায় না।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপকমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, শেডে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর ডিউটি ট্যাক্স বেশি। তাছাড়া দেশে এসব গাড়ির চাহিদা কম থাকায় অনেক আমদানিকারক কৌশলে গাড়ি ছাড় করতে আগ্রহী হন না। আবার যখন নিলামের ডাক দেওয়া হয়, অনেক আমদানিকারক লাভের হিসেব কষে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
এছাড়া দেখা যায়, শেডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা তিন শতাধিকের বেশি গাড়ি অকেজো হয়ে গেছে। এসব গাড়ি যথাসময়ে নিলাম না হওয়ায় বন্দরে দেখা দিয়ে জট। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর নিলামে তোলা ১০০টি গাড়ির ইনভেন্ট্রি শেষ করার পর অন্তত ৫০টির ভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম বিডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, বন্দরের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় অনেক গাড়ি নষ্ট হয়েছে। এছাড়া যেসব গাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এতে রাজস্ব আহরণ বাড়বে।
অন্যদিকে বন্দরের কার শেডে পড়ে থাকা ৩০টি সিমেন্ট মিক্সার মেশিন এবং ১০টি ডাম্পট্রাকও নিলামে বিক্রি করবেন বলে জানান কাস্টম হাউজ।