শতভাগ শিশুকে টিকার আওতায় আনতে হবে

দু’টি নয়, এ বার কি দরকার হতে পারে তিনটি টিকার?

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে সফল কর্মসূচির একটি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল। ১৯৮৫ সালে ইপিআইয়ের আওতায় দুই শতাংশের কম শিশু ছিল। এখন তা ৮২ শতাংশ। ইপিআইতে এখন ১১টি টিকা দেওয়া হয়।
দেশে এক বছরের কম বয়সী ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়। অর্থাৎ ওই বয়সে যতগুলো টিকা পাওয়ার কথা সব টিকা তারা পায় (এর মধ্যে আছে: বিসিজি, পেন্টা, ওপিভি, পিসিভি, আইপিভি, এমআর)। একটি চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, টিকা পাওয়ার হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। গ্রামের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়, শহরে পায় ৭৯ শতাংশ শিশু।
সরকারি ও ইউনিসেফের হিসাব বলছে, এক বছরের কম বয়সী ১৮ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়নি। অন্যদিকে দেশের সব জেলার শিশুরা সমান হারে টিকা পায় না। টিকা পাওয়ার হার সবচেয়ে কম ঢাকা জেলার শিশুদের।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই তথ্য দেওয়া হয়। ‘বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ ২০২৫’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইউনিসেফের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ইউনিসেফের কর্মকর্তা লি শান্তার মতে, টিকার জন্য এক ডলার বিনিয়োগ করলে ২৫ দশমিক ৪ ডলার ফেরত পাওয়া যায়। এর অর্থ হচ্ছে, টিকা না নিলে শিশুরা রোগে আক্রান্ত হয়। সেই রোগ নিরাময়ে ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনরা তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা তুলে ধরেন। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন এ এফ এম মশিউর রহমান বলেন, পূর্ণ ডোজ টিকা না পাওয়া শিশুদের বিষয়ে মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক আবদুল্লাহ মুরাদ বলেন, সব শিশু টিকার আওতায় না আসার কিছু কারণ আছে। প্রথমত মাঠপর্যায়ে জনবল কম আছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে নিরবচ্ছিন্ন টিকা সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।
আশার কথা হলো, বাংলাদেশের মতো সুবিন্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশ্বের কম দেশেই আছে। তবে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সমন্বয়ের ঘাটতি দূর হলে আরও বেশি হারে শিশু টিকার আওতায় আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ জীবনের কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের উচিত হবে শতভাগ শিশুকে যেন টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা যায় সে ব্যবস্থা করা।