দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি মোকাম ও ভোগ্য্য পণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ। শতবছরের পুরানো এই পাইকারি বাজার এখন নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। পলির কারণে জোয়ারের পানিতে প্রতিবছর পানি ওঠে খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন গুদামে। বর্ষা এলেই ক্ষতির মুখে পড়েন মোকামের ব্যবসায়ীরা। তাই বনেদি ব্যবসায়ীরা ছাড়ছেন দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জ। এখানে লেনদেনও কমে এসেছে অর্ধেকে। রমজানকে ঘিরে জমজমাট থাকার চিরপরিচিত দৃশ্যও যেন অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। পলি জমে এই মোকামসংলগ্ন চাক্তাই খালে বন্ধ হয়ে গেছে ২৪টি পুরোনো নৌঘাটও। এ ছাড়া অপরিকল্পিত স্লুইসগেট খাতুনগঞ্জের সংকট আরও বাড়িয়েছে।
একটি জাতীয় দৈনিকে বিষয়টি বিশদভাবে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়। চট্টগ্রাম চেম্বারের সহযোগিতায় সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের বড় পাইকারি এ বাণিজ্যকেন্দ্রে এক দশকে জলাবদ্ধতার কারণে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও কোরবানীগঞ্জে ২ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সরাসরি ক্ষতি হয়েছে পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
বছর কয়েক আগেও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে সন্দ্বীপে নৌপথে পণ্য পরিবহন হতো চাক্তাই খালের মিলিটারি পুল দিয়ে। পলি জমায় ঘাট স্থানান্তরিত হয় খান সাহেবের পুলে। সেটিও বন্ধ হয়ে পণ্য ওঠানামা হচ্ছে খালের মুখে থাকা ফজল করিমের ঘাটে। সন্দ্বীপের পাশাপাশি কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লাসহ চট্টগ্রামের আশপাশের ১১টি জেলার পণ্যও এখন ওঠানামা করতে হচ্ছে এই একটি মাত্র ঘাট দিয়ে। পলি জমায় এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে চাক্তাই খালে থাকা ২৪টি ঘাট। সবেধন নীলমণি হয়ে থাকা ফজল করিমের ঘাটটিও সচল থাকছে শুধু জোয়ারের সময়।
জোয়ারের ওপর নির্ভরশীল চট্টগ্রাম বন্দরে এখন কনটেইনারবাহী জাহাজ ঢুকতে পারে দিনের বেলা শুধু একবার। আবার ১০ মিটারের অধিক কোনো জাহাজ জোয়ার এলেও ঢুকতে পারে না বন্দরে। বহির্নোঙরে কিছু পণ্য খালাস করেই বন্দরে নোঙর করতে হচ্ছে বেশির ভাগ জাহাজকে। এ কারণে বাড়ছে পণ্যের ব্যয়, বাড়ছে জাহাজের দৈনন্দিনের নির্ধারিত খরচও।
শত বছরের পুরোনো ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। এক সময় এখানে বিশ্বাসের ওপর ভর করে চলত শত শত কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। মুখের কথায় একজন অন্যজনের সঙ্গে লেনদেন করতেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু একের পর এক প্রতারণার ঘটনার কারণে ব্যবসায়ীদের সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে।
এই পাইকারি মোকামে ব্যবসা কমে যাওয়ার এমন অনেক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ রয়েছে। প্রধান পাইকারি মোকামে জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করতে যে গবেষণা হয়েছিল তাতে ১৭ দফা সুপারিশ ছিল। সেখানে চাক্তাই খাল পরিকল্পিত উপায়ে খননের সুপারিশ ছিল। যানজট নিরসন করতে বহুমুখী পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করেন গবেষকরা। জলাধার ও সবুজ এলাকা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। খাতুনগঞ্জের সমস্যাসমূহ দ্রুত সমাধান করা দরকার। তা না হলে ক্ষতির অঙ্ক বাড়বে প্রতিবছর।
শতবর্ষী খাতুনগঞ্জ বড় সংকটে
ক্ষতির অঙ্ক কমাতে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা দরকার