ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’
যাবে উড়িশ্যার উপর দিয়ে
ভূঁইয়া নজরুল >
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ এর কথা মনে আছে নিশ্চয়। গত বছরের ১৮ মে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশের যশোর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল ঘূর্ণিঝড়টি। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলে আঘাত করা আম্ফানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল কলকাতা। তবে আগামীকাল বুধবার দুপুরের পর থেকে আঘাত করতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আম্ফানের বিপরীত দিক থেকে উপকূলে আঘাত করবে। এবার সাতক্ষীরার সুন্দরবন অংশের নিচ দিয়ে ভারতের উড়িশ্যার বালেশ্বর ও দীঘার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূলে আঘাত করবে। এর গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ, আম্ফান ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, আর ইয়াস বাংলাদেশের নিচ দিয়ে ভারতে আঘাত করবে।
শক্তির বিচারে আম্ফানের তুলনায় কম থাকা ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় গতকাল সোমবার দুপুরে। এর আগে সোমবার সকালে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়ার পর তা ঝড়ো হাওয়ায় রূপ নেয়ায় ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
তা কতটুকু শক্তিশালী?
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ গতকাল দুপুরে সৃষ্টি হওয়ার পর আজ মঙ্গলবার সারাদিন সাগরে থাকবে এবং উপকূলের কাছাকাছি আসার সাথে সাথে তা দূর্বল হবে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন,‘ ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আর শক্তিশালী হলেও এর পরিধি কমে আসবে। তাই এতো ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।’
কতো কিলোমিটার বেগে তা উপকূলে আঘাত করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে তা ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে আঘাত করতে পারে। আর যদি উপকূলে এসে শক্তিশালীও হয় তাহলে হয়তো সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ উপকূলের জন্য শঙ্কা রয়েছে কিনা?
ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ দেখে মনে হচ্ছে এতে বাংলাদেশ উপকূলে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহমেদ বলেন, মডেলিং দেখে মনে হচ্ছে সাতক্ষীরা এলাকায় হয়তো ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বইতে পারে। এর বেশি কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন,‘ ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ দেখে মনে হচ্ছে এতে বাংলাদেশ উপকূলে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। উপকূলের কাছাকাছি এলে এটি আরো পশ্চিম দিকে টার্ন নিতে পারে। আর যদি তা হয় তাহলে উড়িশ্যার উপর দিয়ে অতিক্রম হতে পারে। তখন কলকাতাও রক্ষা পেয়ে যেতে পারে। আজ মঙ্গলবার এর গতিপথ আরো নিশ্চিত হবে।’
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে স্বাভাবিকভাবেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ তেমন শক্তিশালী আকারে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা কম।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির কারণে ঝড়টি আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং এর পরিধি কমছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহমেদ বলেন, আজও এর প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে। তবে বুধবার বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সাত নম্বর বিশেষ বুলেটিনে জানায়, মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি উড়িশ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূলের মধ্য দিয়ে বুধবার অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে বলে দেশের বন্দরসমূহকে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এসব নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনাও বলা হয়েছিল। বছরের এসময়ে সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এপ্রিল-মে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম।