সুপ্রভাত ডেস্ক »
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এর আগে গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই প্রথম তাঁর চিকিৎসকদের তরফ থেকে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হলো।
রবিবার সন্ধ্যায় একটি সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তবে যে হাসপাতালে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন, বেসরকারি সেই হাসপাতালের কোন চিকিৎসক সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তারা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা করার জন্য পরিবারকে বলেছেন।
‘ওরা কি আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে?’
শারীরিক অবস্থা নিয়ে মনোবল শক্ত রেখে চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখলেও তাদের মুখ দেখে নিজের বর্তমান পরিস্থিতি রিয়েলাইজ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিজের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘ওরা কি আমাকে নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে?’
রবিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাজধানীর গুলশানে বাসভবন ফিরোজায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি উল্লেখ করেন খালেদা জিয়ার প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী (এফএম সিদ্দিকী)। এ সময় তিনি জানান, খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা হেলপলেস ফিল করছেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘এর আগে তিনি চেস্ট টিউব নিয়ে ১৭ দিন কাটিয়েছেন। প্রতিদিন উনার ফ্লুইড বের হয়ে এসেছে। প্রতিদিন উনি নিজের চোখে ব্লাড দেখছেন। এন্ডলেস এটা সিচুয়েশন, সেখান থেকেও কিন্তু আমরা কনফিডেন্টলি বের হয়ে এসেছি। আমরা ম্যাডামকে বলেছি, ম্যাডাম আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন। মনোবল উনার অনেক দৃঢ়, উনি আমাদের যথেষ্ট ট্রাস্ট করেন বিধায়। এছাড়া আমাদের আর কিছু করার উপায় নেই। আল্লাহর রহমতে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। দ্যাট টাইম উই ওয়্যার কনফিডেন্ট, কিন্তু দিস টাইম আমরা কিন্তু হেলপলেস ফিল করছি।’
অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ম্যাডাম আমাদের মুখ দেখে সাডেনলি রিয়েলাইজ করছেন, আগে তো আমরা কনফিডেন্ট ছিলাম। এমনকি অধ্যাপক ডা. জাহিদকে জিজ্ঞাসাও করেছেন, ‘ওদের মুখ এত কালো কেন। ওরা কি আমাকে নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে?’ তখন আমরা আবার গিয়েছি, উনাকে আশ্বস্ত করেছি—না ম্যাডাম, আপনি অসুস্থ হলে তো আমাদের খারাপই লাগে।’’ এ পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন ডা. এফএম সিদ্দিকী।
‘যেহেতু অনেক সময় কিছু করার উপায় থাকে না, সেজন্য আমাদের হেলপলেস লাগে’, বলছিলেন এফ এম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘এখন সিচুয়েশন অনেকটা এরকম ম্যাডামের।’
তিনি উল্লেখ করেন, বেগম জিয়ার এখন যদি ‘টিপস’ মেথড অ্যাপ্লাই করা না হয় তাহলে আগামীতে আবার রি-ব্লিডিং হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ডা. সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বলেন, ‘এখন বর্তমানে ম্যাডাম এমন এক অবস্থায় আছেন যে অবস্থাটা বলা হয় যে, আইদার ইউ ডু সাম স্পেসিফিক সেটা হলো বিশ্বজোড়াই যখন নাকি ভেরিসেসে ব্যান্ডিয়ের পরে রিহ্যাভলিট করে তার একটাই রাস্তা আছে ট্রিটমেন্টের। ইফ ইউ সেন্ড লাইভ অব দ্যা পেসেন্ট টু নিড টু ডু টিপস ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টটু সিস্টেমিক সাম অর্থা যে প্রেসারে ব্লাডটা ভ্যাসেলকে হাইপ্রেসারে ছিঁড়ে ফেলেছে সেটাকে একটা বাইপাস চ্যানেল করে দেয়া এবং এটা লাইফ সেভিংস।’
অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, ‘ম্যাডাম এখন সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত। হিমোগ্লোবিন লেভেল প্রথমবার কমে গিয়েছিল ৫ দশমিক ৫-এ। তারপর আমরা তাকে চার ব্যাগ রক্ত দিয়ে হিমোগ্লোবিন লেভেল ৯-এর কাছাকাছি, ১০ কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলাম। আবার সেটা কমে এসেছিল ৭ দশমিক ৮-এ। এভাবে আমরা রক্ত দিচ্ছি।’
তিনি যোগ করেন, ‘মনে রাখতে হবে উনার যে ব্লিডিংটা হচ্ছে, এই ব্লিডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে—অনেক রক্ত দিয়ে হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়ানো যাবে না। তাহলে আবার সেটা রি-ব্লিডিং করবে। সেজন্য আদর্শ হচ্ছে, হিমোগ্লোবিনকে একটা লেভেলের মধ্যে ধরে রাখতে হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সিদ্দিকী বলেন, ‘আশঙ্কা করছি, যদি আবার রিব্লিডিং হয়, তাহলে সেই ব্লিডিংটা কন্ট্রোল করা এবং সেটাকে বন্ধ করার মতো মিনস বা সাপোর্টিভ টেকনোলজি মেনোভার—এটা আমাদের এখানে নেই। সেক্ষেত্রে উনার ব্লিডিং হয়ে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে।’
তিনটি দেশের সেন্টারে চিকিৎসা সম্ভব
এ পর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘লিভারের পোর্টাল প্রেসার বেড়ে গেছে ম্যাডামের। পোর্টাল প্রেসারের কারণে ব্লিডিং হয় অনেক। এটার পর আবার ব্লিডিং হলে আমরা কিছু কেমিক্যাল এজেন্ট আছে, সেগুলো ইনজেক্ট করে থাকি। আনফরচুনেটলি, সেটা আমরা করতে পারিনি। এটার ওষুধটাও আমাদের দেশে এখন সচরাচর না। আর টিপসের বিষয়টি হচ্ছে—লিভারের ভেতরে প্রেসার কমানোর জন্য সিসটেমিক সার্কুলেশন এবং পোর্টাল সার্কুলেশনের মধ্যে একটা কমিউনিকেশন করে ফেলা।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের রোগীর দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ব্লিডিংয়ের পর সার্ভাইভ করানোটা অনেক ডিফিকাল্ট। সে জন্য এ ধরনের রোগীর জন্য মেইনলি হলো—আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে কিছু সেন্টার আছে, যেগুলোতে এর চিকিৎসা করা হয়। তাও পুরো দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নাই, দুই-চারটা সেন্টার আছে। বিশ্বব্যাপী রোগীরা ওই সব সেন্টারে যায়।’
হাসপাতাল ঢাকায় আনা সম্ভব না
৪০ মিনিটব্যাপী সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা রোগীর পাশাপাশি তার স্বজনদের জানিয়েছি, এসব বিষয়গুলো আপনারা অ্যারেঞ্জ করেন। এটুকু আমরা বলতে পারি এবং বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই দেশে যেটা ম্যাক্সিমাম করা সম্ভব, সেটা করায় রি-ব্লিডিংটা এখন বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু আমরাও ক্রসলাইনে আছি। যিনি রি-ব্লিড করেন, ধরে নিতে পারেন তিনি আবার রি-ব্লিড করবেন। পৃথিবীব্যাপী যে ডাটা আছে সেটাতে বলে যে, নেক্সট সিক্স উইকে রি-ব্লিডিং চান্সেস সেভেনটি পারসেন্ট। আমরা এজন্য অনেকটা অসহায় ফিল করছি। এটা থাডর্টাইম উনার ব্লিডিং হয়েছে। এরপর যদি এরকম বয়সের একজন রোগীর, যার হার্টের প্রবলেম, যার হিমোগ্লোবিন কমে যায়, ডায়াবেটিস আছে, কিডনির ডিজিজ আছে, উনার রেনাল ফেইলর হয়ে যায়, তাহলে এটাকে কীভাবে আমরা সাসটেইন করবো। যদি আমরা প্রেসারটা টিপস দিয়ে না করাতে পারি।’
এ কারণে আমরা তার বিদেশে উন্নত সেন্টারে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছি বলে উল্লেখ করেন ফখরুদ্দিন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘এটা আমরা হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ, রোগীর স্বজনকে জানিয়েছি।’
কারণ উল্লেখ করে সিদ্দিকী বলেন, ‘এখনও টাইম আছে, তিনি স্ট্যাবল আছেন। একটা সময় আসতে পারে, যখন হয়তো শিফট করাটাও ডিফিকাল্ট হয়ে যেতে পারে, ইম্পসিবলও হয়ে যেতে পারে।’
সেটার সময়সীমা আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, ‘সেটা পৃথিবীর কেউ বলতে পারবে না।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় টিপস টেকনোলজি কেবল সুনির্দিষ্ট সেন্টারেই রয়েছে জানিয়ে সিদ্দিকী বলেন, ‘হাসপাতালকে ঢাকায় আনা সম্ভব না, ইম্পসিবল।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডা. জাহিদ হোসেন জানান, এভারকেয়ারের চিকিৎসক বর্তমান চিকিৎসা বোর্ডের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসেননি।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন