সাতকানিয়ায় করোনার প্রভাব
মো. জাহেদ হোসাইন, সাতকানিয়া :
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লিচুর ভরা মৌসুমেও পাইকারদের দেখা মিলছেনা। সাতকানিয়ায় এ বছর লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তারপরও সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পেরে চাষিরা হতাশ। করোনা ভাইরাসের প্রভাব আর লিচু উৎপাদনের মৌসুম যেন একই সমান্তরালে চলছে। একদিকে লিুচর প্রচুর ফলন অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে প্রভাবে বেচা-বিক্রি অনেকটা বন্ধ। করোনা যেন লিচু চাষের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে অনেক চাষিরা বাগানের গাছেই লিচু রেখে দিয়েছেন। ফলে অনেক বাগানির উৎপাদিত মৌসুমের এ ফলটি বাদুড় ও পশু-পাখির খাদ্যে পরিণত হয়েছে। লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে উৎপাদন খরচও তুলতে না পারার আশঙ্কায় অধিকাংশ বাগানির লিচু বাগানেই পঁচে যাচ্ছে। তার ওপর হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এ ঝড়ের প্রভাবে বেশ কিছু বাগানের লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার লিচু চাষি ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাদার্শা, এঁওচিয়া, সোনাকানিয়া ও পুরানগড় ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ করা হয়। এসব ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন পাহাড়ের পাশে অন্তত ৪০.২৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয়, বাঁশখালীর কালীপুর জাত ও চায়না থ্রি জাতের লিচুর চাষ হয়।
তবে স্থানীয় ও কালীপুর জাতের লিচু চাষের পরিমাণ বেশি। এ জাতের লিচু গাছে জানুয়ারি মাসের শুরুতেই ফুলের দেখা মিলে আর মে মাসের শুরু থেকে গাছে লিচু পাকতে শুরু করে। অন্যদিকে চায়না থ্রি জাতের লিচু মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পাকা শুরু হয়। সাতকানিয়ায় চায়না থ্রি জাতের লিচু চাষ খুবই কম। গোটা উপজেলায় চায়না থ্রি জাতের লিচু গাছের পরিমাণ মাত্র দুই শতাধিক। চায়না থ্রি ও মোম্বে জাতের লিচু মিষ্টি হয়। ইদানিং উপজেলার লিচু চাষিদের স্থানীয় জাতের পাশাপাশি চায়না থ্রি ও মোম্বে জাতের লিচু চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও লিচু বাগানের মালিক রাশেদ হোসেন সিকদার দুলু বলেন, পুরানগড়ের পাহাড়ি এলাকায় তার চারটি লিচু বাগান রয়েছে। এসব বাগানে কালীপুর ও চায়না থ্রি জাতের অন্তত চার শ লিচু গাছ আছে। এ বছর লিচুর ভালো ফলন হয়েছে । যা’ কয়েক বছরের তুলনায় বহুগুণ বেশি। এ বছর ফলন ভালো হলেও লিচুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না। শহর কিংবা অন্য জেলা-উপজেলা থেকে একজন পাইকারও লিচু কিনতে আসেননি। আসবে বা কেমন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে দেশে বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। এ এলাকার লিচু বাগানিদের দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের সাথে যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রাশেদ হোসেন সিকদার আরো বলেন, গত বছর প্রতি হাজার লিচু পাইকারিতে বিক্রি করেছি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। ওই বছর প্রায় ১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছি। এ বছর স্থানীয় কিছু খুচরা বিক্রেতা ছাড়া আর কেউ লিচু কিনতে আসেননি। এ বছর লাভের আশা খুব একটা করছিনা উৎপাদন খরচটা উঠাতে পারলে চলত।
মাদার্শার লিচু বাগানের মালিক আনিচুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর গাছে লিচুর মুকুল লাগার পর থেকে পাইকারদের আনাগোনা শুরু হয়ে যেত। এলাকায় ভিড় লেগে যেত লিচুর পাইকারী ব্যবসায়ীদের। এ বছর করোনার প্রভাবে কেউ বাগানের দামও জানতে চায়নি। ফলে স্থানীয় কিছু শ্রমিককে দিয়ে আশপাশের এলাকায় লিচু বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, এ বছর লিচুসহ মৌসুমি অন্যান্য ফলেরও ভালো ফলন হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সাতকানিয়ার ফল চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।