চট্টগ্রাম-১১
শুভ্রজিৎ বড়ুয়া
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্র্থী এবং স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় এলাকা এখন সরগরম। জমেছে উঠেছে দুই আওয়ামী লীগ নেতার প্রচারণা। এমপি বনাম কাউন্সিলরের লড়াই বলছে ভোটাররা।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে দাঁড়িছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এ লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন আরও পাঁচজন। তবে তাদের তেমন হাঁক-ডাক নেই বললেই চলে। ভোটাররা মনে করছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যেই হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আশংকা রয়েছে সংঘর্ষেরও।
এ আসন থেকে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নারায়ন রক্ষিত, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলােেশর আবুল বাশার মোহাম্ম জয়নুল আবেদীন, একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মহি উদ্দিন, কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র জিয়াউল হক সুমন, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এম আবদুল লতিফ এবং সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিম।
ভোটারদের অভিমত
সল্টগোলা ক্রসিংয়ের দোকানি নাজমুল বলেন, ‘এই আসনে সত্যিকার ভোটযুদ্ধ হবে। লতিফ সাহেবের তো জনপ্রিয়তা আছেই। কাউন্সিলর সুমনেরও কম নয়। তারমানে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে।’
ইপিজেড এলাকার এক পোশাক শ্রমিক আয়েশা বলেন, ‘নির্বাচন দিয়ে কি হবে? গার্মেন্টসে চাকরি করি। প্রার্থী কে হইছে বা কে কি করতেছে এগুলো দিয়ে আমাদের কাজ নেই। দুবেলা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারলেই হবে।’
চট্টগ্রাম-১১ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হয় অন্তত ১৫ জন ভোটারের সঙ্গে। এরমধ্যে স্থানীয়রা অনেক কিছু বলতে চাইলেও তাদের নাম জানাতে রাজি নন। তাদের মতে, দুজনই প্রভাবশালী। তাদের কথায় অনেককিছু হয়।
কেইপিজেড এলাকার ভোটার হোসেন বলেন, ‘প্রতিযোগিতা ছাড়া কি নির্বাচন হয়? বিএনপি অংশ নিচ্ছে না নির্বাচনে। নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে লাভ কি? এখানে নৌকার প্রার্থী লতিফ। আর তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সুমন। নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে। আমরা তো দর্শক।’
আসনের পরিধি এবং ভোটার
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১১ আসন। আসনটি পর্যলোচনা করে দেখা যায়, ২৭ দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ পাঠানটুলী, ২৯ পশ্চিম মাদারবাড়ী, ৩০ পূর্ব মাদারবাড়ী, ৩৬ গোসাইলডাঙ্গা, ৩৭ উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮ ক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ৩৯ দক্ষিণ হালিশহর, ৪০ উত্তর পতেঙ্গা, ৪১ দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সমন্বয়ে এ আসনটি গঠিত। নবম জাতীয় সংস নির্বাচনে পুর্নবিন্যাস হয়ে এ আসনটি সাজানো হয় ২০০৮ সালে। এতে বর্তমানে ৫ লাখ ১ হাজার ৮৫৭ জন ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৬ পুরুষ, ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ নারী ও ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে।
লতিফ-সুমন যা বললেন
কেটলি মার্কার প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক। কিন্তু নির্বাচনের আগে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে পোস্টার-ব্যানার কেটে কে বা কারা একটা অস্থিতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। আমি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি। তবে আমাদের দলীয় এমপি যিনি আছেন ওনার কথাবার্তা, আচার-আচরণ জামায়াতের মতো। আমি ওনাকেও দায়ী করে কিছু বলতে চাই না। আমি শুধু পুলিশকে জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। আমি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে খুব আশাবাদী। কারণ আমার সাথে ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আছেন। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা কমিটির ২৮ জনের মধ্যে ১৫ জন আমার পক্ষে আছেন। তাই আমি চাই মানুষ ভোট কেন্দ্রে আসুক। এজন্য আমি ইতোমধ্যে ৭ জানুয়ারির মা-বোন ও বয়স্কদের ভোট কেন্দ্রে আনা-নেওয়ার জন্য রিকশার ব্যবস্থা করেছি।’
পরপর তিনবার নির্বাচিত হওয়া নৌকার প্রার্থী এম আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হয়ে ১৫ বছর ধরে মানুষের সঙ্গে মিশে থাকার চেষ্টা করেছি। মানুষ আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। তাই নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। এজন্য অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি এতো নিশ্চিন্তে কিভাবে আছি। বিষয়টি হলো অধিকাংশ এমপি প্রার্থীরা পরীক্ষার আগের দিন রাত জেগে পড়া শুরু করেছে জায়গায়-জায়গায় প্রচারণায় নেমে। আমিতো সারাবছর ধরে আমার নির্বাচনী এলাকায় মানুষদের জন্য কাজ করেছি। এখন নতুন করে তাদের কাছে ভোট চাওয়ার কিছু নেই। তারা ভালোবেসেই আমাকে বেছে নিবেন, এটা আমার বিশ্বাস। তাই আমি বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যানার-পোস্টার দিয়েছি, ওখানে লিখেছি- কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন, ভোট চোর ধরিয়ে দিন। তবে নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকলে ভোটের খেলা জমে না। এখানে আমি সহ সাত জন দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমার বিপরীতে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ দেখছি না।’