করোনা মহামারি সামাল দিতে আজ থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ শুরু হচ্ছে। গত শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, একদিনে মারা যাওয়া ৫৮ জনসহ দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৯ হাজার ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জন। পাশাপাশি বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৩৬৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে।
এদিকে চট্টগ্রামেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। এখানে গত মার্চ মাসের শুরু থেকে আক্রান্তের সংখ্যার গতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও এখন তা আকাশ ছুঁইছুঁই করছে। এ অবস্থায় সারাদেশের মতো আজ থেকে চট্টগ্রামও লকডাউনে যাচ্ছে। এর আগে গত শুক্রবার থেকে করোনার উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে এখানে ওষুধ, মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সবধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এমন অবস্থায় চট্টগ্রামে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭৬ জন।
আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া লকডাউনের প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা থেকে শহর ও শহরতলীতে যুগপৎ আতঙ্ক ও সাবধানতার আবহ দেখা গেছে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় ছিল, মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তার ছায়া যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রেতের ভীতির মতো। করোনার উচ্চতর ঝুঁকির মোকাবিলায় শঙ্কাকুল মানুষের ভেতর আরও দেখা গেছে জীবনযাপনের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যের উর্ধ¦গতিতে দিশেহারা মনোভাব। একশ্রেণির অসাধু দোকানদার ও পণ্যসামগ্রী বিক্রেতা চলমান দুঃসময় ও মানুষের দুঃখকষ্টকে পুঁজি করে মুনাফার পাহাড় গড়ে তুলতে তৎপর হয়ে উঠেছে। একই অবস্থা ফার্মেসি ও ওষুধবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। এদের ভেতরেও একশ্রেণির মুনাফাপ্রিয় লোক সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহানোর কালে লোভী ও বেপরোয়া হয়ে উঠতে চাইছে।
প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের এদিকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় টহল ও নজরদারি জোরদার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনার ছোবল ও লকডাউনের বাস্তবতার সমতালে মানুষের আয়-রোজগারেও দারুণ টান পড়েছে। বিশাল সংখ্যক শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ অনেকটাই কর্মহারা হয়ে বেকার-অর্ধবেকার হয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। এ অবস্থায় জিনিসপত্রের অযৌক্তিক ও অহেতুক দাম যারা বাড়াচ্ছে, নিশ্চয় তারা গণমানুষের দুশমন। এদের ভেতর বিবেকের জাগরণ বা সদাচরণ প্রত্যাশা করা চূড়ান্ত বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং, এই করোনার দুষ্কালে যারা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বা তার পাঁয়তারা করছে, তাদের বিষয়ে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ ও সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সমাজকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের বিপুল করণীয় রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।
লকডাউনে মানুষের মনে সচেতনতার পরিবর্তে যেন আতঙ্কের সৃষ্টি না-হয়, সেদিকেও তীক্ষè নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্তদের।
মতামত সম্পাদকীয়