লংগদুর মাইনি বাজার জমে উঠেছে গরুর বাজার

ফজলে এলাহী, রাঙামাটি »

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার জনপ্রিয় মাইনি বাজার। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ইতিমধ্যে জমে উঠেছে জেলার সবচে বড় গরুর বাজারটি। জেলার সবচে বড় পাইকারি এই গরুর বাজারে গত এক মাস ধরে প্রতি হাটে বিক্রি হচ্ছে তিনশ থেকে চারশ গরু। কোরবান যতই ঘনিয়ে আসছে গরু বিক্রির হার ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই হাটে পাহাড়ের দেশি জাতের গরু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। খামারিরাও এই জাতের গরুই বেশি লালনপালন করেন। যা ‘রেড চিটাগাং’ নামে পরিচিত।
এই হাট থেকে গরু কিনে পাইকাররা জেলা সদরে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য আবার অনেক ব্যবসায়ী পাহাড়ের এই গরু নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। দেশি জাতের পাহাড়ের এই গরুর কদর পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। নজর কাড়া রঙে এই জাতের গরু দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি চমৎকার দৈহিক গঠনে কোরবানির হাটে সহজেই চোখে পড়ে। রেড চিটাগাং জনপ্রিয় হওয়ার একটি বিশেষ কারণ হল, এর মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পাহাড়ের নির্মল পরিবেশে সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্তভাবে বেড়ে উঠে। এদের মাংসের মধ্যে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে ভালো।
মাইনি বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা খামারী আলমগীর হোসেন জানান, এই বছর তাঁর খামারে মোট ১৪টি গরু কোরবানে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর ১২টি গরু বিক্রি করা হয়েছে এবং দাম পেয়ে জানালেন নিজের সন্তুষ্টির কথা। সাধারণত পাহাড়ের দেশি জাতের এই গরু ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। তিনি জানান, গোখাদ্য হিসেবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবুজ ঘাস খাওয়ানোর ফলে এখানকার গরুর দৈহিক গঠন যেমন সুন্দর, তেমনি এর মাংসে চর্বিও কম থাকে।
রাঙামাটি শহর থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই ১৫-২০টি ট্রাক গরু নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বলে জানান রাঙামাটি পৌর ট্রাক টার্মিনালের ইজারাদার দিদারুল আলম। তিনি বলেন, অনেকেই ১৫-২০টি গরু কিনে কোরবানের জন্য একসাথে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় আবার পাইকাররাও গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের দেশি গরুর চাহিদার কারণে এলাকার চাহিদার মিটিয়ে বাইরেও নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন ইজারাদার।
গরু কারবারি ইমরান হোসেন বলেন, বরকলের এরাবুনিয়া থেকে গরু কিনে এনে সেগুলো রাঙ্গুনিয়া নিয়ে যাচ্ছি। ১৪টি গরু কিনেছি। যে দামে কিনেছি তাতে সন্তুষ্ট, আশা করছি রাঙ্গুনিয়া মরিয়মনগরে গিয়ে বিক্রি করে ভালো লাভ পাবো। ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ বলেন, মাইনি ও সুবলং হাটে তুলনামূলক গরুর দাম কিছুটা কম, তবে সেখান থেকে পশু কিনে এনে বোট ও গাড়ি ভাড়ায় লাভ তেমন একটা থাকে না বলে তিনি জানান। এবছর তিনি এই পর্যন্ত দুই গাড়ি পশু চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করেছেন বলে জানান।
বরকল থেকে ১২টি গরু নিয়ে রাঙামাটি পৌর টার্মিনালের ঘাটে আসা সুনীতি চাকমা বলেন, আমি নিজেই গরু লালনপালন করি। গরুগুলো সারাদিন খোলা মাঠে ছেড়ে দিই। সেখানেই ঘাস খায় সারাদিন। বাসায় আনলে গমের ভূষি কিংবা চালের কুড়া দিই। এদের কোনও ইনজেকশন দিতে হয় না। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে বলে এর মাংস সুস্বাদু ও চর্বিমুক্ত।
পৌর ট্রাক টার্মিনালে স্থাপিত কোরবানি হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই জানান, হাটে যত গরু রয়েছে, সবগুলো দেশি জাতের পাহাড়ি গরু। আর সবার পছন্দের শীর্ষেও এসব গরু। বিক্রেতা মো. আজগর আলী বলেন, পাঁচটি গরু এনেছি, চারটি বিক্রি হয়েছে, যেটা আছে সেটার জন্য অনেকেই দরদাম করছে। আশা করছি সেটাও বিক্রি হয়ে যাবে। সকলেই দেশি জাতের পাহাড়ি গরুই খুঁজছে, তাই এই হাটে অন্য কোনও গরু নেই বললেই চলে।
ক্রেতা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে বন্ধু, আত্মীয়স্বজনরা পাহাড়ি গরুর বিষয়ে বেশ আগ্রহী, তারা দরদাম দেখতে বলেছি, তাই হাটে এসেছি, এখনো যা মনে হচ্ছে দাম একটু বেশি।

এদিকে কোরবানকে সামনে রেখে গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১৫-২০টি গাড়িতে গরু নিয়ে পাইকাররা জেলার বাইরে গরু নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে গরুর দাম বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতা। তাদের দাবি, ঈদের সময় গরু জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়া সীমিত করতে পারলে তবে স্থানীয় বাজারে গরুর দাম স্বাভাবিক থাকবে।
চর্বিমুক্ত হওয়ায় ‘রেড চিটাগাং’ এর চাহিদা ও উৎপাদন পাহাড়ি এলাকায় বেশি বলে জানালেন জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ পরিচালক ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডা. তুষার কান্তি চাকমা।
তিনি বলেন, রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের জন্য লাল চাটগাঁইয়া গরু যেটাকে আরসিসি গরু বলা হয় সেটি খুবই বিখ্যাত। এই গরুগুলো দেখতে সুন্দর এবং এদের মাংসগুলো খুবই সুস্বাদু।
তিনি আরো জানান, আসন্ন কোরবানিতে রাঙামাটিতে ১৯টি হাটের মাধ্যমে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। এ বছর জেলায় পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৮৬০টি। এর বিপরীতে বিভিন্ন খামারে ও ব্যক্তি উদ্যোগে কোররানির পশু প্রস্তুত আছে ৬২ হাজার ৮৮৩টি।