রাঙামাটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি :
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী রোহিঙ্গারা নিজ দেশেই ফিরে যাবেন। কারণ তা না হলে আমাদের জন্য সমূহ বিপদ। অনেকদিন এতগুলো মানুষ থাকলে তারা যদি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়ায় তাহলে সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর, মিয়ানমারের জন্যও ক্ষতিকর। রোহিঙ্গা সমস্যা কেবল আমাদের একক সমস্যা নয়, এটি এখন বৈশি^ক সমস্যা। আমরা বিশ^াস করি, স্থায়ী সমাধান হিসেবে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। তারা ফিরে যাবে বলেই আমরা এখনো আশাবাদী।’
গতকাল সোমবার দুপুরে রাঙামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব-২০২১ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুতুপালং একটি পাহাড়ি এলাকা, আমরা পাহাড়ধসসহ নানা ঝুঁকি এড়াতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের। সেখানে ১ লাখ লোক যেখানে ২২-২৩ হাজার পরিবারকে স্থানান্তর করা হবে। এতে ভাসানচরে যেমনি তারা শান্তিতে থাকবে। এখানকার রোহিঙ্গারাও আগে থেকে ভালো থাকবে। ভাসানচরে গেলে রোহিঙ্গারা মায়ানমারে যে কাজ করতে মাছ ধরত, কৃষিকাজ করত সেটি করতে পারবে। কিছু ইকোনমিক এক্টিভিটিতে আমরা তাদের নিয়োগ করব, তাতে তাদের সন্ত্রাসী হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রথমে আমরা ১৬৪২ জনকে ভাসানচরে নিয়ে গেছি। তবে অনেক দীর্ঘায়িত হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেখানে যেতে রাজি নয়। তারা এটাকে ইস্যু করে, কিন্তু আমরাতো মানুষের মঙ্গল চাই। এখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি তাদের মঙ্গলের জন্য।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচরে এখন রোহিঙ্গারা গেছে, আনাগোনা বাড়ছে। সপ্তাহে এখন দুটি স্টিমার শনিবার ও বুধবার সেখানে যাচ্ছে। প্রথমে যারা ভাসানচর গেছে, তারাই এখন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সেখানে যেতে বলছে। আমরা ভেবেছি ৭-৮শ হবে পরে দেখি প্রায় ১৮শ’ অধিক রোহিঙ্গা। পরে তাদেরও আয়োজন করে ভাসানচরে নেয়া হয়েছে।’
‘ভারতের ওপরেই আস্থা বাংলাদেশের’
করোনার ভ্যাকসিন ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভারত সরকার বারবার অঙ্গীকার করেছেন; তারা যখন ভ্যাকসিন ব্যবহার করবেন, আমরা একই সময়ে ভ্যাকসিন ব্যবহার করব। এটি ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই জানানো হয়েছে। আমরা ভারতকে বিশ^াস করি। আমরা ভারতের সঙ্গে বারবার আলাপ করেছি; তারা আমাদের এটা নিশ্চয়তা দিয়েছে। আমরা অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আলাপ করেছি তাদের হলে আমাদেরকেও দেবেন জানিয়েছে।’
এর আগে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি, সেনাবাহিনী রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. ইফতেকুর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ, জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো, নূরুল আলম নিজামী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাডভেঞ্চার না হলে জীবনের প্রাপ্তি নেই। আমাদের নতুন প্রজন্ম ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার। এজন্য ত্যাগের দরকার, সোনার মানুষ হতে হবে। বাংলাদেশে খুবই ভাগ্যবান জাতি। এদেশে ইয়াং লোকের সংখ্যা বেশি। আগামী ১৫ বছর আমাদের ইয়াং লোক বাড়তেই থাকবে। তাই আমাদের আত্মপ্রত্যয় থাকলে জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।