রোহিঙ্গাদের নিজস্ব আবাস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্ষমতার সমীকরণ বদলে গেছে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক আর বৈশ্বিক নানা কারণে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে রোহিঙ্গা সংকট।
২০১৭ সালে সীমান্তচৌকিতে ‘রোহিঙ্গা জঙ্গিদের’ হামলার অজুহাত তুলে গণহত্যা শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তখন প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পরেও অনেকে এসেছে। আগে থেকেও অনেক রোহিঙ্গা ছিল। সব মিলিয়ে এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নিবন্ধিতদের বাইরেও রোহিঙ্গা রয়েছে।
আট বছর আগে বাংলাদেশে ঢোকার পর রোহিঙ্গাদের আর নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। দুবার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছিল, তবে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বরং গত দেড় বছরে নতুন করে এসেছে ১ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা।
এদিকে রোহিঙ্গাদের একাংশ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে মানব পাচারকারীদের শিকার হচ্ছে। খুন, ধর্ষণের ঘটনা একের পর এক ঘটছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ছড়িয়ে পড়ছে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র।
মানবিক সহায়তাও কমছে। কারণ, আন্তর্জাতিক সহায়তা আগের মতো নেই। শিশুদের পড়ানোর অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে হতাশা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
বিগত আট বছরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে খুন হয়েছেন ২৬৩ জন। এই সময়ে বিভিন্ন অপরাধের ৪ হাজার ৫৪টি মামলায় ৯ হাজার ৩৩ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। কিন্তু ১৪ লাখ রোহিঙ্গার ভেতর থেকে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা কঠিন।
আট বছরে মাদকের ২ হাজার ৫৮৯টি মামলায় ৩ হাজার ৯৩৫ জনকে আসামি করা হলেও অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। একই সময়ে অস্ত্রের ৪১৮টি মামলায় ৮৭৩ জনকে আসামি করা হলেও চিহ্নিতদের অনেককে আইনের আওতায় আনা যায়নি।
বিগত দেড় বছরে ৩৮টি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় ৩৪ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। ৩৭টি অপহরণের মামলায় আসামি করা হয় ৮৯ জনকে। ১৭টি মানব পাচার মামলায় আসামি করা হয় ১৮ জনকে।
এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করছে। প্রথমটি শুরু হয়েছে সোমবার কক্সবাজারে। বাকি দুই সম্মেলনের একটি হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। অন্যটি হবে ৬ ডিসেম্বর কাতারে।
আমরা জানি না সেসব সম্মেলন থেকে এই সংকট সমাধানের পথ বের হয় কিনা। তবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ যে ত্রিশংকু অবস্থায় পড়েছে তা বলার আর অবকাশ রাখে না।



















































