বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ থেকে ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের’ ফিরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং। ক্ষমতা দখলের এক সপ্তাহ পর প্রথম টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ প্রতিশ্রুতির কথা বলেন তবে অতীতের শাসকদের মতো তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে একটি টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, আইডিপি ক্যাম্প থেকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কাজও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে। মিন অং হ্লাইং ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি, বলেছেন ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’। এটি ইতিহাস ও সত্যের অপলাপ। অং সান সু চির মতো নোবেল বিজয়ী মিয়ানমার নেত্রীও ইতিপূর্বে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি বলেননি। অথচ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শতাব্দীর পর শতাব্দী মিয়ানমারে বাস করছেন। সে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে রোহিঙ্গারা, স্বাধীনতার পরে সু চির পিতা অং সান এর সরকারে যোগ দিয়েছে। এটি মিয়ানমারের শাসকদের ইতিহাসের সত্য মুছে ফেলার অপপ্রয়াস।
২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারও আগে দফায় দফায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এদের সংখ্যা ১১ লক্ষাধিক হবে। তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সাথে চুক্তি হয়েছে কিন্তু মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেনি। এমন কি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্ববাসীর চাপ তারা উপেক্ষা করেছে কতিপয় বৃহৎ শক্তির সমর্থনে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইয়ের বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ। সরকার আশা করে মিয়ানমারের এ মনোভাব সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে। তবে বিশেষজ্ঞরা সেনাশাসকের বক্তব্য আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এটিকে ‘ভাল খবর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এ মাসের ৪ তারিখ বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের সাথে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল কিন্তু মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা হতে পারেনি। আমরা আশা করি শীঘ্রই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে ৩ দেশ বৈঠকে বসবে।
এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে ১৯৮২ তে প্রণীত মিয়ানমার নাগরিকত্ব আইনে। তাদের নানা রঙ বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে যা তাদের রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত করেছে। অতীতে কেবল নিরাপত্তা বাহিনী নয়, উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরাও রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস আচরণ করেছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে এবং কফি আনান রিপোর্ট অনুসারে তাদের সকল প্রকার নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করা। আমরা চাই মিয়ানমারের সামরিক শাসক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে আলোচনা দ্রুত শুরু হোক।
মতামত সম্পাদকীয়