রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে চীন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নেবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে টেলিফোনে আলাপে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই এই উদ্যোগের ব্যাপারে জানান। গত শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিয়ানমারের নির্বাচনের পর প্রথমে রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে দ্রুত আলোচনা শুরু করবে বলে চীনকে জানিয়েছে।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ঢাকায় মার্কিন উপÑপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিভেন বিগানের সফর এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার মনোভাব ব্যক্ত করায় চীন দ্রুত বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে যেভাবেই হোক, আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা উচিত।
বৃহৎ শক্তিবর্গ বিশেষ করে চীন, ভারত এবং রাশিয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ৩ বছরে মিয়ানমারের ওপর তেমন কোন চাপ দেয়নি। আমরা আশা করবো চীন এবার এ বিষয়ে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় গাম্বিয়া ৫০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত নথিসহকারে আবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। আবেদনের পক্ষে ৫ হাজার পৃষ্ঠার প্রমাণাদিও উপস্থাপন করেছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলার প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে চারটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুঠপাটের বিভীষিকায় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। এর আগে বিভিন্ন সময় একই কারণে আরো ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও এখনো কোনো শরণার্থীকে ফেরত নেয়নি। উপরন্তু সে দেশে বাস করা অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাকর প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সমর্থন কামনা করে আসছে।
আমরা মনে করি চীন, ভারত ও রাশিয়া মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত না রাখলে এবং তাদের বাধ্য না করলে মিয়ানমার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি করবে এবং নানা ছলছুতো খুঁজবে। চীনের ত্রিপক্ষীয় আলোচনার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই, সেইসাথে আন্তর্জাতিক আদালতে বিষয়টি উপস্থাপিত হওয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের নৈতিক সমর্থন রোহিঙ্গাদের পক্ষে থাকা যুক্তিযুক্ত বলে আমরা মনে করি।
মতামত সম্পাদকীয়