রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে

Rohingya refugees, who crossed the border from Myanmar two days before, walk after they received permission from the Bangladeshi army to continue on to the refugee camps, in Palang Khali, near Cox's Bazar, Bangladesh October 19, 2017. REUTERS/Jorge Silva - RC1F66041E20

মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তির আশা তিরোহিত হয়েছে বহুপূর্বে। সেদেশে লাগাতার অশান্তির আঁচ থেকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশও রেহাই পাচ্ছে না। অন্তত তিন দশক ধরে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এটা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। থেমে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে এদেশে।
আরাকান আর্মি গত ছয় মাস যুদ্ধে রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল এবং দেশটির সেনা ও বিজিপির ক্যাম্প, চৌকি দখলের পরে মংডু শহর দখল নিতে এখন তীব্র হামলা চালাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীও মংডু শহর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পালটা হামলা অব্যাহত রেখেছে। এ সংঘাতের জেরে মংডুসহ আশপাশের গ্রামে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি ঘটছে। এ কারণে নতুন করে ৮ থেকে ১২ হাজার রোহিঙ্গা নৌকা করে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

দুঃখজনক হচ্ছে, শুধু টাকার কারণে রোহিঙ্গাদের দেশে আসতে সহায়তা করছে টেকনাফের স্থানীয় একটি দালাল চক্র। এই চক্র টেকনাফ সীমান্তের জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া ইত্যাদি পয়েন্ট দিয়ে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে রোহিঙ্গাদের দেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এরপর রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পে পরিচিত আত্মীয়স্বজনদের কাছে কিংবা টেকনাফের বিভিন্ন ভাড়া বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করছে।

এরকম মংডু থেকে দালালদের সহায়তায় টেকনাফে আসা রোহিঙ্গা রহিমউল্লাহ এক সাংবাদিককে বলেন, রাখাইনে যুদ্ধ চলছে আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে। অথচ সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। গ্রামের অনেক রোহিঙ্গাকে তারা বিনা কারণে হত্যা করেছে। মর্টারশেল ও বিমান হামলা চালিয়ে অনেক গ্রাম তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাই রাখাইনে খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে নৌকা করে নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের বড়ইতলী দিয়ে রাতের আঁধারে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। এ কাজে স্থানীয় কিছু লোকজন জনপ্রতি ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা করে নিয়েছিল। মংডু থেকে পালিয়ে আসা আরেক রোহিঙ্গা সৈয়দ করিম বলেন, মংডুর গ্রামে যখন হামলা করেছে আরাকান আর্মি, তখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে এক সপ্তাহ সীমান্তের কাছে পাহাড়ে অবস্থান করেছি। আরো শত শত মানুষ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে ছিল। পরে দালালদের সহায়তায় নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের হ্নীলা দমদমিয়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছি। এখনো মিয়ানমারের সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা রয়েছে।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী স্বীকার করেন, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে। এদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় দালাল চক্র।
এই অবস্থায় বর্তমান সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের জোর করে ঠেলে দেওয়ার দীর্ঘদিনের অপচেষ্টার চিত্র বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। কারণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর যে ভাবমূর্তি আছে তাকে তিনি কাজে লাগাতে পারেন।