রেলের পূর্বাঞ্চল : টিকেট কালোবাজারি বন্ধ হবে তো

রেলের টিকেট পেতে দুর্গতির কোনো শেষ নেই। এই দুর্গতির প্রধান কারণ টিকেট কালোবাজারি। বহুবার বহভাবে কালোবাজারি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনোটাই সফল হয়নি। বরং কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য দিনদিন বৃদ্ধিই পেয়েছে। এবার নতুন একটি কর্মসূচি নিয়ে হাজির হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় রেল। খবরে প্রকাশ, টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নীতি বাস্তবায়নে এক মাস ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর অংশ হিসেবে ১৭ দিনে দুই শতাধিক মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির প্রমাণ পেয়েছে রেলওয়ের গঠিত টাস্কফোর্স। এসব মোবাইল নাম্বার রেলওয়ের রেজিস্ট্রেশন ব্লক/বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। টিকিট কালোবাজারি রোধে রেলের গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যক্রম চলমান রেখে মোবাইল নাম্বার ব্লক ও জরিমানা আদায় কার্যক্রম চালিয়ে যাবে রেলওয়ে প্রশাসন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, টিকিট বিক্রি শতভাগ অনলাইনে নেয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারি বেড়ে যায়। যাত্রা শুরুর ১১ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে নিমিষেই অধিকাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। বিশেষত সাপ্তাহিক ছুটির আগে ও পরের দুইদিনের টিকিট নিয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আবার ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালুর পর বিপুল চাহিদাকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী নামে-বেনামে রেজিস্ট্রেশন করে টিকিট ক্রয় করে অবৈধ পন্থায় বেশি দামে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছে। যাত্রীদের অভিযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ ঘোষিত নিয়ম প্রতিপালনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে পূর্বাঞ্চল রেলে ১৩টি ও পশ্চিমাঞ্চল রেলে ১৪টি টাস্কফোর্স গঠন করে। তবে ট্রেনের ব্যাপ্তি বেশি থাকায় পূর্বাঞ্চলের টাস্কফোর্সের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৬টিতে উন্নীত করা হয়। টাস্কফোর্স বিভিন্ন ট্রেনে অভিযান চালিয়ে চলতি ৬ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ দিনে ২০২টি মোবাইল নাম্বারকে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। এসব নাম্বারের মধ্যে চারটি মোবাইল নাম্বার ফোন-ফ্যাক্স ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বলে প্রমাণ পেয়েছে রেলওয়ে। মোবাইল নাম্বারগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে রেলওয়ে টিকিট বিপণনের অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ব্লক করতে টিকিট বিক্রি পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন (জেভি) কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ে।
২৩ অক্টোবর লিড পার্টনার হিসেবে সহজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—বিভিন্ন টাস্কফোর্স কর্তৃক ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নীতি বাস্তবায়নের জন্য টিকিটের ওপর যাত্রীর নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, যাত্রীর প্রদর্শিত পরিচয়পত্র যাচাইসহ চেকিং কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিভিন্ন কালোবাজারি ব্যক্তির ব্যবহার করা মোবাইল নাম্বার শনাক্ত করা হয়। টাস্কফোর্স কালোবাজারিতে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারগুলো স্থায়ীভাবে ব্লক করতে সুপারিশ করেছে।
নিঃসন্দেহে উদ্যোগটির তারিফ করতে হয়। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সন্দেহ হয় কাজটি সফল হবে কিনা। কারণ এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে রেলের ব্যাপক লোকজন জড়িত থাকে। এ সিস্টেমকে অকার্যকর করতে এবারও তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়। এ ছাড়া আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হল, ‘টিকেট যার ভ্রমণ তার’ ভালো কথা, কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করার পন্থাটি কী?