রেলের ইঞ্জিন সংকট লাঘবে সচেষ্ট হতে হবে

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন সংকট কাটছেই না। প্রতিদিন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যেখানে ১০০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) প্রয়োজন হয় সেখানে পাওয়া যায় ৭৮ থেকে ৮০টি মাত্র ।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে রেলবহরে মোট ইঞ্জিন রয়েছে ২৯৭টি। এর মধ্যে মিটারগেজ ১৬৭টি ও ব্রডগেজ ১৩০টি। রেলট্র্যাকে যুক্ত হওয়ার পর একটি ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল রয়েছে এমন ইঞ্জিনের সংখ্যা এখন ১৪৭টি। বাকি ১৫০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫০টি ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রয়েছে ১৬টি। অবশিষ্ট ৮৪টি ইঞ্জিনের বয়স ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বর্তমান রেলওয়ের বহরে থাকা ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে ৫১ শতাংশের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বর্তমানে ৫৮টি আন্তঃনগর এবং কমিউটার ও মেইল ট্রেনসহ ৬০টি ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে ৮টি কন্টেনার ট্রেন এবং ১৯টি গুডস ট্রেন চলাচল করে। রেলওয়ের তথ্য মতে, পূর্বাঞ্চলে বর্তমান বন্ধ থাকা ট্রেনের হিসাবে দেখা যায়, লোকাল ও ডেমু ট্রেন মিলিয়ে পূর্বাঞ্চলে ৩৭টি ট্রেন বন্ধ রয়েছে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কারণ রেলের ইঞ্জিন আমাদের দেশে উৎপাদন হয় না, বিদেশ থেকে আনতে হয়। আমরা আজ যদি অর্থের সংস্থান পাই তাহলে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অর্ডার দিলে ইঞ্জিন পেতে মিনিমাম দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘অর্থের সংস্থান পেতেও সময় লাগে, কারণ এটা রাজস্ব বাজেটের আওতায় হয় না, প্রকল্পের সাহায্য লাগে। ডেভেলপমেন্ট পার্টনার বা দাতা সংস্থার অর্থায়নের প্রয়োজন আছে। এটা এমন নয় যে টাকা দিলাম আর বাজারে গিয়ে ইঞ্জিন কিনে নিয়ে আসলাম।’

জানা গেছে, মিটারগেজ ও ব্রডগেজ মিলে আমাদের এখন ৯০টির মতো ইঞ্জিন প্রয়োজন। নতুন ইঞ্জিন কেনার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে এডিবির অর্থায়নে মিটারগেজের জন্য ৩০টি ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাত্র প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু অর্থায়নের জন্য এডিবি এখনো এগ্রিমেন্টে সাইন করেনি। এগ্রিমেন্ট সাইনের পরে আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবো।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘রেলের সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তুতি বা ক্যাপাসিটি নেই। রেলইঞ্জিন কেনায় দীর্ঘ মেয়াদের কথা বলে, কিন্তু তাদের তো মাস্টারপ্ল্যান আছে। এটি দুই দফায় করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে দক্ষ জনবল নিয়োগের কথা। আর সময়মতো ইঞ্জিন-লোকোমোটিভ কেনার কথা আছে। আসলে রেল সময়ের কাজ সময়ে কখনো করেনি। এভাবে চলতে থাকলে রেল আরও ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।’ এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এর সঙ্গে ইঞ্জিন, ওয়াগন, কোচ, দক্ষ জনবল প্রয়োজন। রেল তো অনুভবই করে না তাদের দক্ষ জনবল লাগবে। এজন্য আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে।’
এটাই রেলের সমস্যা। ইঞ্জিন আনতে যদি তিন বছর লাগে তাহলে ইঞ্জিন কেনার সিদ্ধান্ত তিন বছর আগে নেওয়া হয়নি কেন? তারা কি জানতেন না তিন বছর পর ইঞ্জিনের প্রয়োজন হবে? আসলে রেল পরিচালনায় প্রকৃত সৎ, দক্ষ ও সুদূরপ্রসারী লোক আসেননি। যারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা নিজেদের আখের গোছানোর কাজ ছাড়া রেলকে স্বাবলম্বী করার কথা ভাবেননি। না হলে সবচেয়ে আরামদায়ক, স্বল্পখরচের আরামদায়ক ভ্রমণের সাধারণ পরিবহন রেলওয়ে বছরের পর বছর লোকসানি ও রুগ্ন প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকত না।