রেলওয়ের জন্য ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কেনার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল শেষ পর্যন্ত সেটি আর আলোর মুখ দেখছে না। পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সহজ শর্তে ঋণের পরিবর্তে চড়া সুদ চাওয়ায় ইঞ্জিন কেনার প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে। ঋণ চুক্তি না হওয়ায় বাণিজ্যিক চুক্তিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চলমান সংকট মেটাতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
এর পেছনের কাহিনিটি বড় দীর্ঘ। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ৭০টি ইঞ্জিন কেনার জন্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ে। তাতে সাড়া না মেলায় ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ফের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু তখনও সন্তোষজনক দরদাতা না পেয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৮ সালের মে মাসে এই দরপত্র প্রক্রিয়ার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন পায়।
২০১৮ সালের অক্টোবরে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে বাণিজ্যিক চুক্তি করে রেলওয়ে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঋণের সংস্থান না হওয়ায় ফের জটিলতা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে ইঞ্জিনের দাম ১৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় হুন্দাই রোটেম নিজেরাই। এর বিপরীতে ২০২১ সালের নভেম্বরে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয় রেলওয়ে।
এই প্রস্তাবে হুন্দাই সাড়া না দেওয়ায় দরপত্র প্রক্রিয়া ও বাণিজ্যিক ক্রয়চুক্তি বাতিল এবং দরদাতার দাখিলকৃত পারফরম্যান্স ব্যাংক গ্যারান্টি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে সিদ্ধান্ত আসে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত মে মাসে প্রকল্প বাতিলের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠানো হয়। সে অবস্থাতেই প্রকল্পটির সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে জানান, মূলত চড়া সুদের কারণে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। তার মানে এই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কিনবে না। আমরা আপাতত কিছুটা ইঞ্জিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এটি সত্যি। তবে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকট সমাধান হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
মহাপরিচালকের আশ্বাসবাণীটা পরিহাসের মতো মনে হলো। কারণ তিনি অবলীলায় বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংকটের সমাধান হবে। অর্থাৎ রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকট আরও অন্তত ছয় বছর স্থায়ী হবে। এটা দুঃখজনক যে, এই সংকট তো দুয়েকবছরে সৃষ্টি হয়নি। বেশ কয়েকবছর ধরে রেলে বগি ও ইঞ্জিন সংকটের কথা শুনে আসছি। সমস্যা সমাধানে আগে থেকে তৎপর হলে সমস্যাটি এত গভীর হতো না। এবং এত দীর্ঘ মেয়াদিও হতো না। এখন সংকট কাটিয়ে উঠতেই ছয় বছর লেগে যাবে। তারপরও কথা থাকে। ছয় বছরে বর্তমান সংকট কাটবে বটে তবে ওই ছয় বছরে সৃষ্টি হওয়া সংকট কাটতে আবার কত বছর লাগবে!
এ মুহূর্তের সংবাদ