রেলওয়ে হাসপাতালে রোগীর অভাব কেন

সিআরবিতে অবস্থিত রেলওয়ে হাসপাতাল। এখানে আছে ১০৫ শয্যার জেনারেল ও ৫৫ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। এ দুটি হাসপাতালই এখন রোগী শূন্য থাকে সারা বছর ধরে। বর্তমানে এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার–নেই। রোগীবিহীন হাসপাতালের বিশাল অবকাঠামো জুড়ে নার্স, ওয়ার্ড বয়, ফার্মাসিস্ট, আয়ারা বসে বসে অলস সময় কাটান আর মাস শেষে বেতন নেন।
এমন দৃশ্য সারাবছরই থাকে বলে জানান হাসপাতালের কর্মচারীরা। রেলওয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের ২৩টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকলেও এখানে ছয়জন সিনিয়র নার্সসহ দায়িত্বে আছেন ১৪ জন। রোগী না আসায় তারাও বেকার বসে থাকেন।

সবুজ প্রকৃতিতে ঘেরা সিআরবির বিশাল এলাকা জুড়ে রেলওয়ে হাসপাতালের অবস্থান। হাসপাতাল ভবনসহ পুরো এলাকাটি পাহাড় ও শতবর্ষী বৃক্ষরাজিতে ঘেরা। চিকিৎসার জন্য চমৎকার পরিবেশ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদীর্ঘকাল সুনামের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতালটি। তখন রেলওয়ে হাসপাতালটি রোগীতে পূর্ণ থাকতো বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ের এই হাসপাতালে ছিলেন পর্যাপ্ত চিকিৎসক–নার্স। জটিল অনেক রোগের অস্ত্রোপচার হতো এ হাসপাতালে। সুদৃশ্য কেবিনের চারপাশ ছিল সবুজ গাছগাছালিতে ভরা। চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের পরেই চট্টগ্রামের রোগীদের ভরসার স্থান ছিল রেলওয়ে হাসপাতাল। এক কথায় জটিল রোগীর ভরসাস্থল ছিল এ হাসপাতাল। এটি এখন শুধুই অতীত। বর্তমানে নগরবাসী দূরের কথা, খোদ রেলওয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান না।

অনেকে অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে গত এক দশকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হয়েছে এক সময়ের সুনাম আর খ্যাতি ছড়ানো রেলওয়ে হাসপাতালটি।

তবে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ বলেন, আমি একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন। আমি যদি কোনো রোগীর অপারেশন করি তাহলে আমার একজন সহকারী দরকার, সেটাও নেই। একজন অ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার দরকার, কিন্তু কেউই নেই। আর শুধু এমবিবিএস ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা হয় না। এমবিবিএস ডাক্তারদের একটি সীমাবদ্ধতা আছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দরকার। আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির জন্য। কিন্তু রেলওয়েতে এই ব্যাপারে কারো মাথাব্যথা নেই। এখানে যদি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ একজন শিশু বিশেষজ্ঞ, একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং একজন কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকতেন তাহলে রোগীরা আসতেন।
সমস্যাটি তাহলে কোথায়? হাসপাতালের নাকি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের? হাসপাতালের অভাবে যেদেশে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় সে দেশে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতাল সঠিক সিদ্ধান্ত, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় অনীহার কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে তা হতে পারে না। এটা দেশের মানুষের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করার সামিল। হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি আমরা।