রেমিট্যান্স বাড়ানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে রেমিট্যান্স। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরে প্রবাসী আয়। নানামুখী সংকটে থাকা দেশের অর্থনীতিতে তা কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল। কিন্তু গত দুই মাস আবারো নেতিবাচক ধারায় রয়েছে রেমিট্যান্স। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারের দিক থেকে দৃশ্যমান নীতি ও কৌশল নিতে হবে, যা বর্তমানে তেমন দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে ১ হাজার ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৮৮০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত জুলাইয়ে দেশে ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এর পরের দুই মাস আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এসেছে যথাক্রমে ২২২ কোটি ৪২ লাখ ও ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। অক্টোবরে কিছুটা কমে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। আর সদ্য সমাপ্ত নভেম্বরে এসেছে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে এ খাতে আয় কমেছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২২২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে অবশ্য গড়ে ১৭৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার এসেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ২০২০ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে করোনাভাইরাসসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান। ওই বছরের ১ আগস্ট থেকে দেশে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হয়। অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাইয়ে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে ঈদুল আজহার ভূমিকাই বেশি ছিল। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে চলতি বছরের জুনে। গত জুনের মাঝামাঝিতেও দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, সেটি ইতিহাসে তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, আমরা ধরেই নিয়েছি রেমিট্যান্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে, কিন্তু তা নয়। এজন্য যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। যাতে করে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ বোধ করেন। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। অনতিবিলম্বে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য আমাদের কৌশল গ্রহণ করা উচিত এবং সেটি যাতে প্রবাসীদের কাছে দৃশ্যমান হয়।’
আমরাও মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বৈধপথে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে প্রবাসীদের উৎসাহ বৃদ্ধি করা যায় সে চেষ্টা করা উচিত।