এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া »
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সভার রেজুলেশন কারচুপির মাধ্যমে সমিতির মালিকানাধীন একটি মৎস্য প্রকল্প ও লবণ মাঠ পছন্দের ব্যক্তিকে ইজারা দিতে সভাপতিসহ একটি পক্ষের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোছাইন ও সহসভাপতি কামাল উদ্দিন বাবুলের নেতৃত্বে পরিচালকদের একটি পক্ষ ওই মৎস্য প্রকল্পটি ১ কোটি ৪০ লাখ ৬ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে আগের ইজারাদার মনজুর আলমকে ২০২৩ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার বছরের জন্য পুনরায় ইজারা দিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোছাইন কক্সবাজার জেলা সমবায় অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এ অবস্থায় সমিতির মালিকানাধীন মৎস্য প্রকল্প ও লবণ মাঠের জমি ইজারাখাতে অনিয়মের কারণে এবছর ওই একটি প্রকল্প থেকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা সমিতির রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বদরখালী সমিতির সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, সমিতির পূর্নাঙ্গ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতি বছর বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন ১১টি মৎস্য ঘের ও লবণ মাঠের জমি উন্মুক্ত ভাবে ইজারা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নোটিশ জারি করেছেন। সেই মোতাবেক আমরা ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নিই। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত রোববার ১ ডিসেম্বর সমিতি কার্যালয়ে উন্মুক্ত ভাবে ১১টি লবন মাঠ চিংড়ি প্রকল্প ইজারা প্রক্রিয়ার আয়োজন করা হয়।
সম্পাদক দাবি করেন, উন্মুক্ত ভাবে নিলাম প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোছাইন ও সহসভাপতি কামাল উদ্দিন বাবুলের নেতৃত্বে ৬ জন পরিচালক জিয়া উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন শাকিল, ডা: নাজিম উদ্দীন, নুরুল কাদের ও হামিদ উল্লাহ ইতোমধ্যে মিলেমিশে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে সমিতির মালিকানাধীন সাতডালিয়া নতুনঘোনা লবণ মাঠ চিংড়ি প্রকল্পটি আগের ইজারাদার মনজুর আলমকে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে পাইয়ে দিতে অতীব গোপনে সমিতির সভার রেজুলেশন কারচুপি করে কারসাজি শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে সভাপতি দেলোয়ার হোছাইন নিজেই নির্বাহী আদেশমূলে তাদের পছন্দের ইজারাদারকে চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠের জমি ইজারা দিতে অনুমোদনের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন মর্মে জানিয়ে এতে সুপারিশ করতে কক্সবাজার জেলা সমবায় অফিসার জহির আব্বাস এর কাছে আবেদন জানান।
এরই প্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর কক্সবাজারের জেলা সমবায় অফিসার জহির আব্বাস ওই আবেদনে সুপারিশ করে লবণ মাঠ চিংড়ি প্রকল্পটির আগের ইজারাদার মনজুর আলমকে ইজারা মূল্যের ৭৫ পার্সেন্ট টাকা আদায় পূর্বক সাতডালিয়া নতুনঘোনা লবণ মাঠ চিংড়ি প্রকল্পটি পুনরায় ইজারা দিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিপত্র সম্পাদনের সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সমিতির সম্পাদক মঈন উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত এবং সমবায় আইনের নীতিমালা অনুযায়ী নিলাম প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ভাবে করার সিদ্ধান্ত থাকলেও নিলাম অনুষ্ঠানের ঠিক একদিন আগে এসে সমিতির সভাপতি কর্তৃক তাদের পছন্দের ইজারাদার মনজুর আলমকে লবণ মাঠ চিংড়ি প্রকল্পটি পুনরায় ইজারা দেয়ার অপচেষ্টার ঘটনায় সমিতির বিপুল টাকা রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, লবণ মাঠ চিংড়ি প্রকল্পটি উন্মুক্ত ভাবে প্রতিযোগিতামুলক ইজারা দেওয়া গেলে এবছর ইজারা মূল্য ২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এতে সমিতির কমপক্ষে আরও ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় সমিতির সভাপতি, সহসভাপতি ও তাদের পক্ষের ৬ পরিচালকদের অনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং সমিতি বিরোধী ভূমিকার কারণে এবছর ১১টি মৎস্য প্রকল্প ও লবণ মাঠের জমি ইজারা খাতে বিপুল টাকা রাজস্ব ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে বদরখালী সমিতি। এমন প্রেক্ষাপটে সমিতির বড়ধরনের আর্থিক ক্ষতিসাধন ঠেকাতে সম্পাদক মঈন উদ্দিন ৪০ হাজার সভ্য পোষ্য এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদরখালী সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোছাইন বলেন, সাতডালিয়া নতুনঘোনা লবণ মাঠ চিংড়ি ঘেরটি বিগত ১৩ বছর একটি মহল লাগিয়তের নামে লুটপাট করেছে। ওই ১৩ বছরে সমিতি এই ঘোনা থেকে রাজস্ব পেয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। আর আমরা এই ঘোনাটি বছরে ৩৫ লাখ টাকা করে চারবছরে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকায় ইজারা দিচ্ছি।
তিনি বলেন, রেজুলেশন কারচুপির অভিযোগ সঠিক নয়, ব্যবস্থাপনা কমিটির ৬ পরিচালক, সহসভাপতি ও আমি সভাপতি মিলিয়ে কোরাম পূরণ হওয়ায় আমরা সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগের ইজারদার মনজুর আলমকে লবণ মাঠ চিংড়ি ঘেরটি ইজারা দিতে উদোগ নেওয়া হয়েছে।