হানিফ রাজা »
নদীর পাশে পাখিপুর নামে একটি গ্রাম ছিলো। গ্রামটা খুবই শান্ত। সে গ্রামে একটি ছোট্ট স্কুল ছিলো। সকাল হলেই স্কুলে যাওয়ার শব্দে গ্রামের পাখিরাও যেন গান গাইতো। সেই স্কুলেই পড়তো রিমি আর রুমি।
রিমি একটু শান্ত স্বভাবের। খাতা-কলমে সুন্দর করে লেখে, আর প্রতিদিন দুই বেণি করে স্কুলে আসে।
আর রুমি একটু দুষ্ট ও চঞ্চল প্রকৃতির ছিলো। সে সবার সঙ্গে মিশতে ভালোবাসে, খেলা করতে ভালোবাসে। তার চোখে যেন দুষ্টু হাসি সবসময় লুকিয়ে থাকে।
ওরা দুজনেই থাকে পাশের বাড়িতে এবং দুজনেই প্রথম শ্রেণিতে পড়ে, পাশাপাশি বসে, একসঙ্গে খেলাধুলা করে, এমনকি একই রকম জামা পড়তেও ভালোবাসে। রিমির মা বলেন, “রুমি না থাকলে রিমির মুখে হাসিই যেনো ফোটে না।”
একদিন স্কুলে নতুন একটা খেলার সামগ্রী আনা হলো একটা রঙিন দোলনা। সবাই লাফিয়ে উঠে দোল খেতে লাগলো। কিন্তু দোলনায় একসঙ্গে একজনই উঠতে পারে।
রিমি আগে উঠতে চাইল। রুমিও বলল, “আমি আগে উঠবো!”
কে আগে দোলনায় উঠবে তার জন্য দুজনেই একসাথে দৌড়ে গেল দোলনার দিকে। ধাক্কাধাক্কি করতে করতে রিমি পড়ে গেল মাটিতে। ওর হাঁটুর সামান্য কেটে গেল, রক্ত ঝরতে লাগলো।
রুমি ভয় পেয়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে রিমিকে ধরল, “রিমি! রিমি! তুমি ঠিক আছো?”
রিমির চোখে পানি, কিন্তু সে বলল, “আমি ঠিক আছি।”
রুমি চিৎকার চেঁচামেচি করে বন্ধুদের ডাকতে লাগলো। এরপর তাদের ডাকাডাকি আর চিৎকার শুনে টিচার এসে রিমিকে হেলথরুমে নিয়ে হাঁটুতে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। রুমি সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকল।
পরদিন, রিমি হাসিমুখে স্কুলে এলো। হাঁটুতে ব্যান্ডেজ, কিন্তু মুখে হাসি নেই।
রুমি দৌড়ে গিয়ে বলল, “রিমি, আমি খুব দুঃখিত। আমি দোলনায় আগে উঠতে গিয়ে তোমাকে ধাক্কা দিয়েছিলাম। তুমি রাগ করেছো?”
রিমি হেসে বলল, “রাগ করলে কি তুমি আমার বন্ধু থাকতে পারবে?”
রুমি মাথা নিচু করে বলল, “না।”
রিমি তার হাত ধরল, “তাহলে বন্ধুত্ব থাকুক, খেলা থাকুক, ভালোবাসাও থাকুক!”
দুজন আবার হাত ধরে হেঁটে গেল খেলার মাঠে এইবার আর ধাক্কা নয়, তারা মিলেমিশে একসাথে পালা করে খেলল এবং তারা বুঝতে পারলো বন্ধু মানে কেবল খেলা নয় বন্ধু মানে যত্ন, মা আর ভালোবাসা।