সুপ্রভাত ডেস্ক »
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে মানুষের চলাচলে বাধা দিলে আইন অনুযায়ী যেটা ‘যৌক্তিক’ সেটা করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
আন্দোলনকারীদের আদালতের আদেশ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, “আইন আমাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে আমরা সেটাই করব।”
কোটা আন্দোলনকারীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিটি কর্মদিবসে কোনো দিন সড়ক ও কোনো দিন সড়কের পাশাপাশি রেলপথ অবরোধ করেছে।
কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের আদেশে স্থিতাবস্থা দেওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে। শুক্রবারও ঢাকার শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন হয়েছে, নতুন কর্মসূচি আসবে বলেও জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন।
তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু চার সপ্তাহের স্থিতাদেশ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের ভরসার জায়গা। সেখানে আমাদের সকলের উচিত তাদের মেনে চলা। কেউ যদি একমত না হন তবে কোর্টে গিয়ে বলতে পারেন। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থীরা এ কারণে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘাটচ্ছে।
“অনেকে জায়গায় গাড়িতে হাত দিচ্ছে। মামলাও হয়েছে। কেউ যদি মনে করে কোর্ট মানবে না, হাই কোর্ট মানবে না, পুলিশের কথা শুনবে না, তাহলে আমাদের করার আর কী আছে? তারা যদি জানমালের ক্ষতি করেন, রাস্তায় মানুষকে চলাচল করতে না দেন, তাহলে যেটা যৌক্তিক আমরা সেটাই করব।”
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা তুলে দিয়ে জারি করা পরিপত্র গত ৫ জুন হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পর সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে, অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে নামে। পরে তারা কোটা সংস্কারের দাবি সামনে নিয়ে আসে।
বুধবার হাই কোর্টের আদেশে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেওয়ার পরদিন হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য অংশ প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সব ধরনের কোটাই রাখতে হবে, তবে সরকার চাইলে কোটার হার কমাতে পারবে, আর কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করা যাবে।
তবে ২০১৩ সাল থেকে এই নীতিতেই নিয়োগ চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার পর সবশেষ বিসিএসে ৬২ শতাংশের বেশি নিয়োগ হয়েছে মেধা তালিকা থেকে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার শাহবাগে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করতে আসা শিক্ষার্থীদের প্রথমবারের মত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এরপরেও শিক্ষার্থীরা চার ঘণ্টা অবরোধ চালিয়ে যায়
এদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামেও সড়ক অবরোধ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে।
পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামান ভাঙচুরের অভিযোগে শুক্রবার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে পুলিশ।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এই আন্দোলনের ওপর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভর করেছে। শিক্ষার্থীরা কার বিপক্ষে আন্দোলন করবে? সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ তো তাদের পক্ষেই আছে। এরপরে আন্দোলন চলমান থাকা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো গোষ্ঠী বা মহল এই আন্দোলনকে উসকানি দিচ্ছে।”
আন্দোলনে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছে কি না, এই প্রশ্নে হারুন অর রশীদ বলেন, “আমরা এটা বলতে পারি কেউ যদি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা না মানে, সে অনুযায়ী অপেক্ষা না করে রাস্তা বন্ধ করে গাড়িতে হামলা করে, ইট-পাটকেল ছোঁড়ে তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি অনুপ্রবেশকারীরাই এ কাজগুলো করছে।
“না হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাবে। যেহেতু বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে এসেছে, তারা একটা নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা মনে করি সে পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করা উচিত। আর যদি না করে তাহলে যেটা যৌক্তিক আমরা সেটাই করব।